নফল রোজা ভাঙলে কি কাজা করতে হবে?
ফরজ ও ওয়াজিব রোজা ছাড়াও ইসলামে নফল রোজা পালনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। নফল রোজা পালন যদিও আবশ্যক বিষয় নয়, তবে কেউ পালন করলে এতে বিশেষ সওয়াব অর্জন হয়।
নফল রোজা সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য একটি নফল রোজা রাখল, আল্লাহ তায়ালা তার মাঝে এবং জাহান্নামের মাঝে একটি দ্রুতগামী ঘোড়ার ৫০ বছর রাস্তার দূরত্ব রাখবেন। -(কানযুল উম্মাল, হাদীস: ২৪১৪৯)
নফল রোজা পালন করা যেহেতু আবশ্যক নয় তাই কেউ শুরু করার পর কোনও কারণে ভেঙে ফেললে তার কাজা করতে হবে কিনা?- এমন প্রশ্ন করেন অনেকে।
এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদেরা বলেন, কেউ নফল রোজা ভাঙলে তার জন্য এর কাজা করা ওয়াজিব।
আলেমরা বলেন, আম্মাজান হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেছেন, আমাকে ও হাফসাকে কিছু খাবার হাদিয়া পাঠানো হল; সেদিন আমরা দু’জন রোজা রেখেছিলাম। তবে হাদিয়া পেয়ে আমরা রোজা ভেঙ্গে ফেললাম।
এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে আসলে আমরা বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের কাছে কিছু হাদিয়া পাঠানো হয়েছিল; সেটা খাওয়ার জন্য আমাদের তীব্র আগ্রহ হল বিধায় আমরা রোজা ভেঙ্গে ফেললাম।
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, উচিত হয়নি; তোমাদেরকে এ দিনের বদলে অন্য একদিন রোজা রাখতে হবে। -(সুনানে আবু দাউদ, ২৪৫৭, সুনানে তিরমিজি, ৭৩৫)
শাইখ উছাইমীন (রহ.) বলেন: ‘যদি কোন ব্যক্তি রোজা রাখে, এরপর এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয় যে, এর কারণে তার রোজা ভাঙ্গা জরুরি হয়ে যায়; তাহলে সে রোজা ভেঙ্গে ফেলবে।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন আমল রয়েছে বলে জানা যায়। বর্ণিত হয়েছে, একবার নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা.- এর কাছে এসে বললেন: তোমাদের কাছে কোন খাবার আছে? আয়েশা রা. বললেন, আমাদেরকে হাইস (একজাতীয় খাবার) হাদিয়া দেয়া হয়েছে। তিনি বললেন, ‘আমাকে দেখাও তো; আমি তো রোজা রেখে ভোর করেছি’। এরপর তিনি খেয়েছেন।’ (সহীহ মুসলিম, ১১৫৪, তিরমিজি, ৭৩৩, নাসায়ী, ২৩২৭, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২১৪৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৯১৩)
‘আল্লামা সিনদী (রহ.) বলেন, আলোচ্য হাদীস প্রমাণ করে, নফল রোজা ভাঙা জায়েজ এবং এর উপরই মতামত দিয়েছেন হানাফী মাজহাবের অধিকাংশ আলেম। তবে নফল ভাঙলে তার কাজা আদায় করা ওয়াজিব বলেছেন তারা। তবে এর কারণে কাফফারা ওয়াজিব হবে না। -(আল জাওহারাতুন নিয়ারাহ : ১/১৪১, ফাতহুল কাদির : ২/৩৬৫, ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া : ৫/১৯১)
এনটি