হিংসা-বিদ্বেষ যেভাবে নেক আমল ধ্বংস করে
হিংসা-বিদ্বেষ একটি ভয়াবহ আত্মিক রোগ। এটি মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে করে তুলে দুর্বিষহ ও বিষময়। হিংসা হিংসুককে তিলে তিলে ক্ষয় করে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, আল্লাহর জমিনে তোমরা দম্ভ ভরে চলো না, কেননা তুমি কখনই এ জমিন বিদীর্ণ করে এর নিচে যেতে পারবে না, আর উচ্চতায় তুমি কখনো পর্বতসমানও হতে পারবে না। -(সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত ৩৭)
অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘..বলে দাও, তোমাদের আক্রোশেই তোমরা মরো..।’ (সুরা আলে ইমরান: ১১৯)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) ইরশাদ করেন, 'তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাকো কেননা হিংসা নেক আমল এমনভাবে খেয়ে ফেলে (ধ্বংস করে দেয়) যেমন আগুন কাঠখণ্ডকে খেয়ে ফেলে (জ্বালিয়ে শেষ করে দেয়)।' -(সুনানে আবি দাউদ: ৪৯০৩)
হিংসা মানুষকে আল্লাহর জিকির থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং সর্বোপরি অন্যান্য নেক আমল এবং দীন-ধর্মও ধ্বংস করে দেয়।
হিংসা-বিদ্বেষ জান্নাতে প্রবেশের অন্তরায়। তাই মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জান্নাত দেওয়ার আগে হিংসা-বিদ্বেষ থেকে তাদের অন্তরকে পবিত্র করবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি তাদের অন্তর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ বের করে ফেলব, তারা সেখানে ভাই ভাই হয়ে আসনে মুখোমুখি বসবে।’-(সুরা হিজর: ৪৭)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : প্রতি সপ্তাহে দুইবার—সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দাদের কর্ম (আল্লাহর দরবারে) পেশ করা হয়।
তখন সব মুমিন বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, শুধু ওই ব্যক্তি ছাড়া, যার ও তার অন্য ভাইয়ের মধ্যে বিদ্বেষ ও শত্রুতা আছে। এদের বিষয়ে বলা হয়, এদের বিষয় স্থগিত রাখো, যতক্ষণ না এরা ফিরে আসে। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৫)
অন্য হাদিসে মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত্রে (১৪ই শাবানের দিবাগত রাতে) আল্লাহ তাঁর বান্দাদের দিকে দৃষ্টিপাত করেন এবং তাঁর সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন, শুধু শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি এবং যে ব্যক্তির সঙ্গে অন্য ভাইয়ের বিদ্বেষ আছে তারা ছাড়া। (সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহিহাহ, হাদিস : ১১৪৪)
জুবাইর ইবনুল আউআম (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলোর ব্যাধি তোমাদের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছে : হিংসা ও বিদ্বেষ। এই বিদ্বেষ মুণ্ডন করে দেয়। আমি বলি না যে তা চুল মুণ্ডন করে, বরং তা দ্বিন বা ধর্মকে মুণ্ডন ও ধ্বংস করে দেয়। আমার প্রাণ যার হাতে তার শপথ করে বলছি, বিশ্বাসী না হলে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর পরস্পর একে অন্যকে ভালো না বাসলে তোমরা বিশ্বাসী বা মুমিন হতে পারবে না। এই ভালোবাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যম আমি শিখিয়ে দিচ্ছি, সর্বত্র ও সর্বদা পরস্পরে সালাম প্রদানের প্রথা প্রচলিত রাখবে। -(তিরমিজি, হাদিস : ২৫১০)
এনটি