মানুষকে দেখানোর জন্য দান করলে যে ক্ষতি
গরিব, দুঃখীর প্রয়োজনে এগিয়ে আসা, দান করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন হয়। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমাদের আমি যা দিয়েছি তা থেকে দান করো সেই দিন আসার আগে, যেদিন কোনও রকম বেচাকেনা, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৪)
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন
অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘তোমরা যা কিছু দান করো তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করো, আর যা কিছু তোমরা দান করো, তার পুরস্কার পুরোপুরি প্রদান করা হবে।’ -(সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭২)
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তুমি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে যা-ই ব্যয় করো না কেন, তোমাকে তার প্রতিদান নিশ্চিতরূপে প্রদান করা হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও, তারও (প্রতিদান দেওয়া হবে)।’ -(বুখারি, হাদিস : ৫৬)
গোপনে দান উত্তম
বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে দানের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হলেও গোপনে দানকে উত্তম বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান করো, তাহলে তা কতই না উত্তম! আর যদি তা গোপনে করো ও অভাবীদের প্রদান করো, তবে তোমাদের জন্য তা আরও বেশি উত্তম...। ’ -(সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭১)
হাদিসে এসেছে কেয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়াতলে যে সাত শ্রেণির মুমিন আশ্রয় পাবে, তাদের অন্যতম হলেন, ‘ওই ব্যক্তি, যিনি এমনভাবে গোপনে দান করেন যে তার ডান হাত কী খরচ করে, বাম হাত তা জানতে পারে না। ’-(মুসলিম, হাদিস : ১০৩১)
লোক দেখানো দানের ক্ষতি
তাই গোপনে দান করা উত্তম, তবে অন্যকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে প্রকাশ্যেও দান করা যায়। দান প্রকাশ্য অথবা গোপন যাই হোক তা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য হতে হবে। মানুষকে দেখানোর জন্য দান করা যাবে না। কারণ মানুষকে দেখানোর জন্য দান করলে আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না। এতে ইবাদতের মাহাত্ম্য নষ্ট হয়।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা দানের কথা প্রচার করে এবং (দান গ্রহণকারীকে) কষ্ট দিয়ে তোমাদের দানকে বরবাদ করে দিয়ো না, ঠিক ওই লোকের মতো যে শুধু লোক দেখানোর উদ্দেশ্যেই দান করে...। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৪)
আল্লাহর রাসুল নিজেও লোক দেখানো আমল থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তিনি রিয়াকে (লৌকিকতা) ছোট শিরক (আল্লাহর অংশীদার নির্ধারণ) বলেছেন।
আল্লাহর রাসুল বলেন, ‘আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক নিয়ে যতটা ভয় পাচ্ছি, অন্য কোনও ব্যাপারে এতটা ভীত নই। ’ তারা (সাহাবি) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, ছোট শিরক কী? তিনি বলেন, রিয়া বা প্রদর্শনপ্রিয়তা। আল্লাহ কিয়ামতের দিন বান্দার আমলের প্রতিদান প্রদানের সময় বলবেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে যাদের দেখাতে তাদের কাছে যাও। দেখো তাদের কাছে তোমাদের কোনো প্রতিদান আছে কি না?’ -(মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২৫২৮)
মানুষকে দেখানোর জন্য দান করলে পরকালে এর জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ বিচারকার্য পরিচালনার শুরুতেই তিন ব্যক্তিকে ডাকবেন। তাদের একজন হবে এমন দানবীর যে মানুষকে দেখানোর জন্য দান করেছিল।
তাকে দেওয়া নেয়ামত (সম্পদ) সম্পর্কে অবহিত করা হলে সে তা স্বীকার করবে। তখন জিজ্ঞাসা করা হবে, এর জন্য তুমি কী আমল করেছ?
সে বলবে, আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্য আমি আপনার পছন্দনীয় সব রাস্তাতেই ব্যয় করেছি।
এরপর আল্লাহ তায়ালা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। বরং তুমি এজন্যই ব্যয় করেছ, যাতে (তোমাকে) দাতা বলা হয়। (দুনিয়াতে তোমাকে) তা বলা হয়েছে।
তার সম্পর্কে আদেশ করা হবে, ফলে তাকে তার মুখের উপর (অধঃমুখে) টেনে-হেঁচড়িয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ -(তিরমিজি, ২৩৮২)
অতএব আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় বা দান করার সওয়াব শুধু সেই ব্যক্তিই লাভ করবে, যে স্বীয় সম্পদ দান করে অনুগ্রহ প্রকাশ করবে না এবং মুখ দিয়ে এমন কোনও তুচ্ছ বাক্যও বের করবে না, যা গরীব-অভাবীর সম্মানে আঘাত হানে এবং সে তাতে ব্যথা অনুভব করে। কেননা, এটা এতো বড় অপরাধ যে, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তিন শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন না। তাদের মধ্যে একজন হল, (দান করে) অনুগ্রহ প্রকাশকারী ব্যক্তি।’-(মুসলিম, ১০৬)
এনটি