সফর মাসের ফজিলত ও আমল
হিজরি বর্ষপঞ্জির দ্বিতীয় মাস সফর। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২টি, যা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী সেই দিন থেকে চালু আছে যে দিন আল্লাহ তায়ালা আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ। এটাই দ্বীন (এর) সহজ সরল (দাবী)।’ -( সুরা তাওবা, ৩৬)
সফর আরবি শব্দ। এর অর্থ, অর্থ খালি, শূন্য। মহররম মাসে যুদ্ধ বন্ধ থাকায় আরবরা এ মাসে দলে দলে যুদ্ধে যেত। ফলে তাদের ঘর খালি হয়ে যেত। আর আরবিতে ‘সফরুল মাকান’ বলতে এমন জায়গা বুঝায় যা মানুষ শূন্য। এজন্য এ মাসের নামকরণ করা হয় ‘সফর’।
কোনও সময় বা মাসের সঙ্গে মঙ্গল-অমঙ্গলের সম্পর্ক নেই
ইসলাম পূর্ব জাহেলি যুগে আরবে সফর মাস ঘিরে নানা কুসংস্কার প্রচলিত ছিল। এবং এ মাসকে অশুভ মনে করা হতো। অথচ আল্লাহর সৃষ্ট প্রতিটি দিন ও মাসই অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। কোনও সময় বা মাসের সঙ্গে মঙ্গল অমঙ্গলের সম্পর্ক নেই। ইসলামি বিশ্বাস মতে, কল্যাণ-অকল্যাণ নির্ভর করে মানুষের বিশ্বাস ও কর্মের উপর।
এ বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘রোগে সংক্রমিত হওয়া বলতে কিছুই নেই, কোনো কিছু অশুভ নয়। প্যাঁচার মধ্যে কুলক্ষণ নেই এবং সফর মাসেও কোনো অশুভ কিছু নেই...। ’ -(বুখারি, হাদিস : ৫৭৬৯)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা বলল, তোমাদের কর্ম দোষের দুর্ভাগ্য তোমাদের সঙ্গেই আছে।’- (সূরা ইয়াসিন : আয়াত ১৯) অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক ব্যক্তির কল্যাণ ও অকল্যাণের পরোয়ানা আমি তার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছি।-(সূরা বনী ইসরাঈল, ১৩)
অতএব কোনও বিশেষ সময়ের সঙ্গে অমঙ্গল বা অকল্যাণের সম্পর্ক নেই। তাই আল্লাহ তায়ালার রহমত ও বরকত পেতে হলে এ মাসেও বেশি বেশি ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদতে মশগুল থাকা উচিত।
আল্লাহ তায়ালা যাদের সফল বলেছেন
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘মহাকালের শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ (সুরা-১০৩ আসর, আয়াত: ১-৩)
অথার্ৎ কল্যাণ-অকল্যাণ ও ক্ষতি থেকে সেই ব্যক্তিরা নিরাপত্তা লাভ করবে, যারা চারটি বিষয় নিষ্ঠার সাথে পালন করে— ঈমান, সৎকর্ম, অপরকে সত্যের উপদেশ এবং সবরের উপদেশদান। তারাই এই ক্ষতির কবল থেকে মুক্ত। কেননা, মানুষের পার্থিব জীবন যেমনভাবেই অতিবাহিত হোক না কেন, মৃত্যুর পর সে চিরস্থায়ী নেয়ামত এবং জান্নাতের চিরসুখ লাভ করে ধন্য হবে।
আমল
তাই সবার উচিত আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে নেক আমল করা। আর প্রতি চন্দ্রমাসে নির্দিষ্ট কিছু আমল থাকে। সে আমলগুলো সফর মাসে করা যেতে পারে। যেমন ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিজের তিনটি রোজার প্রতি যত্নশীল হওয়া।
প্রতি মাসে ৩টি রোজা পালনের কথা হাদিসে এসেছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আ’মর ইবনে আ’স রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘প্রতি মাসে তিনটি করে সিয়াম পালন, সারা বছর ধরে সিয়াম পালনের সমান” (বুখারীঃ ১১৫৯, ১৯৭৫)
এছাড়া প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার অভ্যাস করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুই দিন বিশেষ রোজা রাখতেন। এ বিষয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- বৃহস্পতি ও সোমবার আল্লাহ তায়ালার সামনে বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয়, তাই আমি চাই- আমার আমল পেশ করার সময় আমি যেন রোজা অবস্থায় থাকি। -(সুনানে নাসায়ী, ২৩৫৮)
সর্বোপরি ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদা যথাযথ পালন করার সাথে সাথে নফল দান সদকার প্রতি মনোযোগী হওয়া। নতুন মাসে বরকতের চাঁদ দেখে দোয়া পাঠ করা।
এনটি