৪০ দিন জামাতে নামাজ আদায়ে যে ফজিলত
নামাজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। ঈমানের পরই নামাজের অবস্থান। মুসলিম ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে নামাজ। নামাজের হিসাব না দিয়ে কেউ কেয়ামতের দিন পার পাবে না।
কেয়ামতের দিন নামাজের হিসাব
হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় কেয়ামতের দিন বান্দার যে কাজের হিসাব সর্বপ্রথম নেওয়া হবে তা হচ্ছে নামাজ। সুতরাং যদি তা সঠিক হয়, তাহলে সে পরিত্রাণ পাবে। আর যদি (নামাজ) খারাপ হয়, তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
যদি তার ফরজের (ইবাদতের) মধ্যে কিছু কম পড়ে যায়, তাহলে আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘দেখ তো! আমার বান্দার কিছু নফল (ইবাদত) আছে কি না, যা দিয়ে ফরজের ঘাটতি পূরণ করে দেওয়া হবে?’ অতঃপর তার অবশিষ্ট সমস্ত আমলের হিসাব ঐভাবে গৃহীত হবে। -(আবু দাউদ ৮৬৪, তিরমিজি ৪১৩, ইবনে মাজাহ ১৪২৫)
৪০ দিন জামাতে নামাজের ফজিলত
ইসলামে নামাজ আদায়ের প্রতি যত্নবান হওয়ার পাশাপাশি জামাতে তাকবিরে উলার (প্রথম তাকবির) সঙ্গে নামাজ আদায়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন জামাতে নামাজ আদায় করবে এবং সে প্রথম তাকবিরও পাবে— তার জন্য দুইটি মুক্তির পরওয়ানা লেখা হবে- (এক) জাহান্নাম থেকে মুক্তি; (দুই) নেফাক থেকে মুক্তি।’ -(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪১)
সুতরাং ইমামের তাকবীরে তাহরীমার বলার সঙ্গে সঙ্গে নামাজে শরিক হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কোনও কোনও আলেমের মতে সূরা ফাতেহা শেষ হওয়ার আগে জামাতে শরিক হতে পারলেও তাকবীরে উলার সওয়াব অর্জন হবে।
পূর্ববর্তী আকাবির আলেমরা জামাত ও তাকবিরে উলার সঙ্গে নামাজ আদায়কে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (রহ.) একাধারে পঞ্চাশ বছর তাকবিরে উলার সঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন। -(হিলইয়াতুল আওলিয়া : ৪/২১৫)
নামাজে অলসতার শাস্তি
নামাজ ঠিকমতো আদায় করলে যেভাবে পরকালে আল্লাহ তায়ালার শাস্তি থেকে মুক্তি, জান্নাত লাভ ও বিভিন্ন পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে ঠিক তেমনি নামাজ আদায়ে অলসতা অথবা একেবারে আদায় না করলে কঠিন শাস্তির কথা এসেছে হাদিসে।
এ বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার প্রাণ যার হাতে, তার শপথ করে বলছি, আমার ইচ্ছা হয় আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দিই আর নামাজের আজান দেওয়ার জন্য হুকুম দিই। তারপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করি, যেন সে লোকদের নামাজের ইমামতি করে। আর আমি ওই সব লোকদের দিকে যাই, যারা নামাজের জামাতে হাজির হয়নি এবং তাদের বাড়িঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিই। ’ -(বুখারি, হাদিস : ৬১৮)
নামাজ ঠিকমতো আদায় না করলে পরকালের কঠিন শাস্তির পাশাপাশি দুনিয়াতেও ৬টি আজাবের সম্মুখীন হতে হবে-
১. জীবনের বরকত উঠিয়ে নেওয়া হবে। ২. চেহারা থেকে নূর ও জ্যোতি উঠিয়ে নেওয়া হবে। ৩. ভালো কাজ করলে তার সুফল ভোগ করতে পারবে না। ৪. দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করবেন না। ৫. আল্লাহ ও ফেরেশতা অসন্তুষ্ট থাকবেন, ফলে মানসিক অস্থিরতা বিরাজ করবে। ৬. ইসলামের শান্তি ও প্রতিশ্রুতি থেকে বঞ্চিত হবে। (শারহুল আকিদাতুত তাহাবি : ২৬৮)
- ( সূত্র : ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১০৭; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৪০; রদ্দুল মুহতার ১/৫২৬)
এনটি