পাহাড়ের চূড়ায় দৃষ্টিনন্দন মসজিদ
পাহাড়ের সর্বোচ্চ শিখর-শৃঙ্গ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার মিটারের বেশি উঁচু। আর সেখানে সপ্রতিভ দাঁড়িয়ে আছে একটি মসজিদ। সজীব অরণ্যে ঘেরা সবুজ পাহাড়ের বুকে নান্দনিক আল্লাহর ঘর।
অনেক দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন, সারি সারি সবুজের ঢেউয়ে জেগে উঠেছে– আধ্যাত্মিক ও পারলৌকিক স্থাপনা আল্লাহর পবিত্র ঘর মসজিদ। বিস্ময়-জাগানিয়া ও নয়নাভিরাম এই মসজিদ আলো ছড়ায় দর্শকের চোখেমুখে।
পুলক-বৈভবের আধার এই পাহাড় ও মসজিদ উভয়টির একই নাম। ‘কিবলা পাহাড়’ ও ‘কিবলা জামে মসজিদ’। আনাতোলিয়া সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, কেবলা পাহাড়ের এ মসজিদটি নবম শতাব্দীতে নির্মাণ করা হয়। কাঠের তৈরি মসজিদটি দীর্ঘকাল এ অবকাঠামোয় টিকে ছিল। তবে ১৯৬০ সালে একবার আগুন লেগে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মসজিদের পুরো আঙিনা সৌন্দর্যের কুঞ্জ-কাঁঠিতে ভরা। শ্যামল নিসর্গ ও সবুজ-পল্লবে ছাওয়া। বুনো প্রকৃতির সতেজ আমেজ ও মাঝে মাঝে নেমে আসা শুভ্র মেঘের ভেলা— আনন্দ-বিভা ছড়ায় সবার মনো-গহীনে। চোখ জুড়ানো ও মনোরম এ মসজিদ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
পাখিদের বৈচিত্র্যময় কুজন ও বহুবিধ কল্লোল এবং রাত-বিরাতে ঝিঁ ঝিঁ পোকার হল্লা মুসল্লিদের কর্ণকুহরে মধুময় সুর ছড়ায়। পাহাড়ের বুকে এমন সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের মসজিদটি তুরস্কে অবস্থিত। উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের রেজা প্রদেশের গনি সো জেলায়।
পর্বতটি ‘কিবলা পাহাড়’ নামে প্রসিদ্ধ হওয়ার কারণ, এটি কিবলার দিকে হওয়ার পাশাপাশি প্রদেশের অনেক জেলা থেকে এটি দেখা যায়। ফলে কালের পরিক্রমায় এই নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।
এরপর প্রায় দেড় বছর ধরে ২০০৯ সালে নতুন করে তুর্কি স্থাপত্য-রীতিতে মসজিদটির সংস্কার ও নির্মাণকাজ করা হয়। মসজিদের ভেতরে-বাইরে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়। এছাড়াও পাহাড়ের গা বেয়ে মসজিদে পৌঁছানোর জন্য একটি রাস্তা, মসজিদের আঙিনা থেকে পাহাড়ে হেঁটে বেড়ানোর ছোট ছোট পথ এবং পর্যটক ও দর্শকদের জন্য বিশ্রাম নেওয়ার স্থান ও ফুলের বাগান তৈরি করা হয়। ২০১০ সালে এ শহরে শৈশব কাটানো তুর্কি প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান মসজিদটি উদ্বোধন করেন।
এরপর ২০১৫ সালে পাহাড় ও শহরকেন্দ্রিক বনাঞ্চলে অবস্থিত মসজিদ কমপ্লেক্সগুলো নতুন করে সংস্কারের উদ্যোগ নেন এরদোয়ান। সেই সংস্কার প্রকল্পে মসজিদগুলোকে আরও বেশি প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব করে তোলা হয়।
মসজিদটি উদ্বোধনকালে তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা কিবলা পর্বতমালার শীর্ষে অবস্থিত মসজিদটিতে দাঁড়িয়ে আছি। এর বর্ণোজ্জ্বল দীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। অনেক কিংবদিন্তর জীবন-কাহিনী এটির সঙ্গে মিশে আছে। আর এ মসজিদটির কথা আমি শৈশব থেকেই শুনে আসছি। এটি আমাদের গর্ব ও কীর্তির অংশ। যারা গ্রীষ্মে এখানে ভ্রমণে আসেন, তাদের অনেক মোবারকবাদ।
কিবলা মসজিদের কর্তৃপক্ষও বিশ্বাস করেন, চমৎকার পরিবেশ-প্রকৃতির কারণে এটি পর্যটকদের বাড়তি মনোযোগ আকর্ষণ করবে। ভবিষ্যতে একটি গুরুত্বপর্ণ আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠবে।