যেভাবে দোয়া করতে বলেছেন নবীজি সা.
দোয়া আল্লাহ তায়ালার কাছে চাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। সুখে, দুখে বিপদে-আপদে প্রতি মুহুর্তে বান্দা আল্লাহ তায়ালার কাছে চাইলে তিনি খুশি হন। তাঁর কাছে না চাইলেই বরং তিনি নারাজ হন। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব’। -(সূরা মুমিন, আয়াত: ৬০)
এই আয়াতে বান্দাকে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করার আদেশ করা হয়েছে এবং তা কবুল করারও ওয়াদা করা হয়েছে। যারা দোয়া করে না, তাদের জন্যে শাস্তিবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন হাদিসে দোয়া করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানিয়েছেন। হাদিসের আলোকে দোয়া করার বেশ কিছু নিয়ম তুলে ধরা হলো-
১) দোয়া করার আগে আল্লাহ তায়ালার যথোপযুক্ত প্রশংসা করা।
ফাযালা বিন উবায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসে ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে নামাজ আদায় করলেন, এরপর দোয়া করলেন : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ করে দাও, তুমি আমাকে রহম কর’। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: হে নামাজি! তুমি বেশ তাড়াহুড়া করে ফেললে। তুমি নামাজ আদায় করে যখন বসবে তখন আগে আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করবে, আমার ওপর দরুদ পড়বে। এরপর আল্লাহর কাছে দোয়া করবে।’ -( তিরমিজি,৩৪৭৬)
২) নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়া।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ না পড়া পর্যন্ত যেকোনো দোয়া আটকে থাকে। (আল-মুজাম আল-আওসাত ১/২২০)
৩) দোয়া কবুল হওয়ার বিষয়ে আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস রাখা।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা দোয়া কবুল হওয়ার বিশ্বাস নিয়ে দোয়া কর। জেনে রাখ, আল্লাহ তায়ালা অবহেলাকারী ও অমনোযোগী অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।’ (সুনানে তিরমিজি,৩৪৭৯)
৪) অনুনয়-বিনয়, আশা ও ভয় প্রকাশ করে চাওয়া।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক।’-(সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৫)
পবিত্র কোরআনে আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত, আর তারা আমাদেরকে ডাকত আগ্রহ ও ভীতির সাথে এবং তারা ছিল আমাদের নিকট ভীত-অবনত।’ -(সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯০)
আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘আর আপনি আপনার রবকে নিজ মনে স্মরণ করুন সবিনয়ে, ভীতচিত্তে ও অনুচ্চস্বরে, সকালে ও সন্ধ্যায়।’ - (সূরা আরাফ, আয়াত: ২০৫)
৫) গোপনে দোয়া করা, শব্দ না করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক।’ -(সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৫)
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা দোয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ আদব শিক্ষা দিয়েছেন। প্রথমত, অপারগতা ও অক্ষমতা এবং বিনয় ও নম্রতা; যা দোয়ার প্রাণ। আল্লাহর কাছে এর মাধ্যমে নিজের অভাব-অনটন ব্যক্ত করা। দ্বিতীয়ত, চুপিচুপি ও সংগোপনে দোয়া করা; যা উত্তম এবং কবুলের নিকটবর্তী। কারণ, উচ্চস্বরে দোয়ার চাওয়ার মধ্যে প্রথমত, বিনয় ও নম্রতা বিদ্যমান থাকা কঠিন। দ্বিতীয়ত, এতে রিয়া এবং সুখ্যাতিরও আশংকা রয়েছে।
এনটি