আরবি ১২ মাসের নামকরণ হয়েছে যেভাবে
ইসলাম পূর্ব সময় ও হিজরি সাল সূচনার আগে থেকেই আরবরা চন্দ্র মাসের ব্যবহার করতেন। অন্যান্য সালের মতো হিজরি সালেও ১২টি মাস রয়েছে। আল্লাহ তায়ালার কাছেও ১২ মাসে এক বছর।
যেমন তিনি ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে গণনার মাস ১২টি, এর মধ্যে চারটি সম্মানিত। (সুরা তাওবা : ৩৬)। এ আয়াতের চারটি সম্মানিত মাসকে চিহ্নিত করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের সময় মিনা প্রান্তরে দাঁড়িয়ে বলেন, তিনটি মাস হলো জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং অন্যটি হলো রজব। (তাফসিরে ইবনে কাসির)।
হিজরি ১২ মাসের নামকরণ
১) মহররম : এর অর্থ হারামকৃত, মর্যাদাপূর্ণ। যেহেতু এ মাসের মর্যাদার কথা বিবেচনা করে যুদ্ধবিগ্রহ হারাম বা নিষিদ্ধ মনে করা হতো, এজন্য এ মাসকে মহররম বলা হয়। (গিয়াসুল লোগাত : ৪৫৭)।
২। সফর : অর্থ খালি, শূন্য। মহররম মাসে যুদ্ধ বন্ধ থাকায় আরবরা এ মাসে দলে দলে যুদ্ধে যেত। ফলে তাদের ঘর খালি হয়ে যেত। আর আরিবিতে ‘সফরুল মাকান’ বলতে এমন জায়গা বুঝায় যা মানুষ শূন্য। এজন্য এ মাসের নামকরণ করা হয় ‘সফর’।
৩। রবিউল আউয়াল : শাব্দিক অর্থ : বসন্তের শুরু। এ মাসের নামকরণ করা হয় বসন্তকালের শুরু লগ্ন হওয়ার কারণে। (রেসালায়ে নুজুম : ২২৯)।
৪। রবিউল আখের বা সানি : ‘আখের’ অর্থ শেষ। বসন্তকালের শেষ পর্যায়ে হওয়ায় এ মাসের নামকরণ করা হয় রবিউল আখের। (রেসালায়ে নুজুম : ২২৯)।
৫। জুমাদাল উলা : আরবি শব্দ ‘জুমুদ’ থেকে এর উৎপত্তি। অর্থ জমে যাওয়া, স্থবির হওয়া। আর ‘উলা’ অর্থ শুরু বা প্রথম। যখন এ মাসের নাম রাখা হয়, তখন ছিল শীতের শুরু লগ্ন। যখন ঠাণ্ডায় সবকিছু জমে যেত। অবস্থার সঙ্গে মিল রেখে এ মাসের নাম রাখা হয় ‘জুমাদাল উলা’।
৬। জুমাদাল উখরা : ‘উখরা’ অর্থ শেষ। শীতকালের শেষ লগ্নে গিয়ে এ মাসের নামকরণ করা হয় বলে এ মাসের নাম রাখা হয়েছে ‘জুমাদাল উখরা’।
৭। রজব : শাব্দিক অর্থ সম্মান করা। আরবরা এ মাসকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা আল্লাহর মাস বলত এবং যথেষ্ট সম্মান করত। এজন্য এ মাসের নাম রাখা হয়েছে ‘রজব’। (রেসালায়ে নুজুম : ২৩০)।
৮। শাবান : শাব্দিক অর্থ ছড়িয়ে দেওয়া, বিচ্ছিন্ন হওয়া। যেহেতু এ মাসে অসংখ্য কল্যাণ ও রহমতের বৃষ্টি বর্ষিত হয় এবং হায়াত, মওত, রিজিক এবং তাকদিরের নানা বিষয় ফেরেশতাদের হাতে ন্যস্ত করা হয়, এজন্য এ মাসের নাম রাখা হয়েছে ‘শাবান’।
অথবা আরবরা রজব মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ থাকার পর এ মাসে যুদ্ধ করতে ছড়িয়ে পড়ত। তাই এ মাসের নাম ‘শাবান’ রাখা হয়েছে।
চারটি সম্মানিত মাসকে চিহ্নিত করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের সময় মিনা প্রান্তরে দাঁড়িয়ে বলেন, তিনটি মাস হলো জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং অন্যটি হলো রজব। (তাফসিরে ইবনে কাসির)।
৯। রমজান : অর্থ জ্বালিয়ে দেওয়া। যেহেতু এ মাসে বান্দার গুনাহ জ্বলে-পুড়ে পরিষ্কার হয়ে যায় অথবা গরমকালে এ মাসের নামকরণ করা হয়, এজন্য এ মাসকে ‘রমজান’ বলা হয়। (ইবনে কাসির, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৩৬)।
১০। শাওয়াল : অর্থ তোলা, উঠানো। আরবরা এ মাসে শিকার করার জন্য কাঁধে অস্ত্র উঠাত, এজন্য এর নামকরণ করা হয়েছে ‘শাওয়াল’। (ইবনে কাসির, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩০০)।
১১। জিলকদ : অর্থ বসে থাকা। আরবরা এ মাসে যুদ্ধ না করে বসে থাকত, এজন্য এর নামকরণ করা হয়েছে ‘জিলকদ’। (ইবনে কাসির, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২২৬)।
১২। জিলহজ : হজের মাস বলে এ মাসকে জিলহজ বলা হয়। (ইবনে কাসির, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২২৬)।
এনটি/