হিজরতের আগের বছরগুলো ক্যালেন্ডারে গণনা করা হয় না কেন?
ইসলামী বর্ষপঞ্জির গণনা করা হয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের সময় থেকে। কিন্তু নবীজি সা. নবুয়ত পেয়েছিলেন হিজরতের আরো ১৩ বছর আগে। হিজরতের সময়টা ইসলামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিন্তু এর আগের ১৩ বছরকে হিজরি বর্ষে হিসাব করা হয় না । হিজরি বর্ষের ক্ষেত্রে মানুষ সাধারণত বলে থাকে ১৪৪৩ সাল, কেউ এর সাথে ইসলামের সূচনার ১৩ বছরকে হিসেব করে ১৪৫৬ হিজরি গণনা করে না।
এর কারণ হলো, মক্কার ১৩ বছর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই সময়ে তিনি মানুষকে আল্লাহ তায়ালার দিকে আহ্বান করেছেন। মুশরিকদের অকথ্য নির্যাতন সয়েছেন। এটা ইতিহাসের অন্যতম অংশ। মুসলিম-অমুসলিম কেউ এটা অস্বীকার করতে পারবে না। তবে ইসলামী বর্ষপঞ্জি হিসেবের ক্ষেত্রে হিজরতের বছরকে নির্ধারণ করার কারণ হলো, হিজরতের মাধ্যমেই ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি তৈরি হয়েছিলো।
হজরত ওমর রা.-এর শাসনামলে (১৬/১৭/১৮ হিজরিতে) সাহাবায়ে কেরাম হিজরতের বছর থেকেই ইসলামী বর্ষের সূচনার বিষয়ে একমত হন।
অর্থাৎ হিজরতের পর মদিনায় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্ভয়ে আল্লাহ তায়ালার বিধান পালন করতে পেরেছেন। এবং সেখানে তিনি মসজিদ নির্মাণ ও অন্যান্য কাজ করেছিলেন। অর্থাৎ একটি ইসলামী রাষ্ট্রের ভৌগলিক, সামাজিক, রাজনৈতিক অবকাঠামো শুরু হয় এখান থেকেই। কিন্তু হিজরতের আগে মুসলমানদের এমন কোনো কাঠামো বা ব্যবস্থা ছিলো না।
হজরত ওমর রা.-এর শাসনামলে (১৬/১৭/১৮ হিজরিতে) সাহাবায়ে কেরাম হিজরতের বছর থেকেই ইসলামী ইতিহাসের সূচনার বিষয়ে একমত হন।
ইমাম বুখারী রহ. লিখেছেন, সাহল ইবনে সাদ রা. বলেন, সাহাবায়ে কেরাম ইসলামী বছর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়ত ও তাঁর ওফাত থেকে নির্ধারণ করেননি। বরং তাঁর মদিনায় আগমনের সময় থেকে করেছেন। ( বুখারী, ৩৯৩৪)
আমিরুল মুমিনীন হজরত ওমর রা.-এর সামনে একটি চুক্তিপত্র আনা হলো। এর শেষে লেখা ছিলো ‘এটা পরিশোধের সময় শাবান মাস’। এই শাবান মাসের দ্বারা চলতি বছর, বিগত বছর নাকি আগামী বছরের শাবান মাস উদ্দেশ, তা অস্পষ্ট ছিলো। ওমর রা. তখন সাহাবাদের একত্রিত করে তাদের সাথে তারিখ নির্ধারণের বিষয়ে পরামর্শ করলেন, যেন এর মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ ও অন্য বিষয়গুলো সহজে পালন করা যায়।
তখন কেউ পারস্যের তারিখ, কেউ রোমানদের তারিখের ওপর নির্ভরের পরামর্শ দেন। কিন্তু কোনোটাই পছন্দ হলো না ওমর রা.-এর। আবার কেউ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম, কেউ নবুওয়ত, কেউ হিজরত এবং কেউ ওফাতের বছর থেকে সালের গণনার পরামর্শ দেন। এরমধ্যে হিজরতের বছরটি যেহেতু ইতিহাসে আলোচিত, সবার কাছে পরিচিত, তাই ওমর রা. এই বছরকেই পছন্দ করলেন, অন্য সাহাবিরাও এর পক্ষেই মত দিলেন।
ইমাম বুখারী রহ. লিখেছেন, সাহল ইবনে সাদ রা. বলেন, সাহাবায়ে কেরাম ইসলামী বছর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়ত ও তাঁর ওফাত থেকে নির্ধারণ করেননি। বরং তাঁর মদিনায় আগমনের সময় থেকে করেছেন। ( বুখারী, ৩৯৩৪)
ইবনে হাজার আসকালানী রহ. লিখেছেন, যে বিষয়গুলোকে ভিত্তি নির্ধারণ করে ইসলামী ক্যালেন্ডারের সূচনা করা যেত। এমন বিষয় চারটি। ১, নবীজির জন্ম, ২, নবুওয়ত, ৩) হিজরত, ৪) ওফাত। সাহাবায়ে কেরামের কাছে হিজরত ইসলামী ক্যালেন্ডারের জন্য গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
অর্থাৎ হিজরতের পর মানুষেরা নবীজির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি মসজিদ নির্মাণ ও অন্যান্য কাজ করেছিলেন। অর্থাৎ একটি ইসলামী রাষ্ট্রের ভৌগলিক, সামাজিক, রাজনৈতিক অবকাঠামো শুরু হয় এখান থেকেই। কিন্তু হিজরতের আগে মুসলমানদের এমন কোনো কাঠামো বা ব্যবস্থা ছিলো না।
কারণ নবীজির জন্ম ও নবুওয়ত প্রাপ্তির বছরের মধ্যে মতপার্থক্যের সম্ভবনা রয়েছে। আর নবীজির ওফাতের বিষয়টির সাথে শোক এবং দু:খ জড়িত। এরপর এই চারটি বিষয়ের মধ্যে শুধু হিজরতের বছরটিই অবশিষ্ট থাকে, তাই এর থেকেই ইসলামী বর্ষের হিসেব ধরা হয়। এর মাধ্যমে উদ্দেশ ইসলাম হিজরতের মাধ্যমেই শক্তিশালী হয়েছে। এছাড়া কেউ তো একথা কখনো অস্বীকারও করে না যে ইসলামের বাস্তবিক সূচনা হিজরতের আরো ১৩ বছর আগে হয়েছে।- বিদায়া-নেহায়া,৩/২৫১-২৫৩
এনটি/