জুমার খুতবার সময় দানবাক্সে টাকা উঠানো যাবে কি?
জুমা সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনের অন্যতম আমল হচ্ছে চুপ করে ইমামের খুতবা শোনা। বর্তমানে বিভিন্ন মসজিদে জুমার খুতবার সময় দানবক্সে টাকা উঠানো হয়। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এটা কি জায়েজ নাকি নাজায়েজ?
এক্ষেত্রে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি হলো-
জুমার খুতবা চলাকালীন টাকা উঠানো বা দানবাক্স চালানো নাজায়েয। কেননা জুমার খুতবা শোনা এবং ওই সময়ে চুপ থাকা ওয়াজিব। খুতবা চলাকালীন সব ধরনের কাজকর্ম, কথাবার্তা এমনকি নামাজ, যিকির ও তিলাওয়াত পর্যন্ত নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন–
وإذا قرئ القرأن فاستمعوا له وأنصتوا لعلكم ترحمون
যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং চুপ থাকো, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত হয়। (সূরা আরাফ, ২০৪) এই আয়াতের তাফসীরে মুজাহিদ রহ. বলেন, এ আয়াত নামাজ ও জুমার খুতবার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৪৪৪)
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন–
مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ وَزِيَادَةُ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ وَمَنْ مَسَّ الْحَصَى فَقَدْ لَغَا
যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করল অতঃপর জুমায় এসে চুপ করে মনোযোগ সহকারে (খুতবা) শুনল, তার পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হবে। আর যে কঙ্কর স্পর্শ করল সে অনর্থক কাজ করল। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৫৭)
অপর এক হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন–
إذا قلت لصاحبك يوم الجمعة أنصت والإمام يخطب فقد لغوت
জুমার দিন ইমাম খুতবা দিচ্ছেন এমন সময় যদি তোমার পাশের ব্যক্তিকে বল ‘চুপ কর’ তবে তুমি অনর্থক কাজ করলে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৩৪)
ইমাম ইবনে ওয়াহাব রহ. বলেন–
مَعْنَاهُ أَجْزَأَتْ عَنْهُ الصّلَاة وَحُرِمَ فَضِيلَة الْجُمُعَة.
এর অর্থ হল, তার জুমার ফরয আদায় হলেও সে জুমার ফজিলত থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল। (ফাতহুল বারী ২/৪৮১)
তাই জুমার দিন খুতবার সময় দানবাক্স চালানো কিংবা উঠে টাকা উঠানো ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সম্পূর্ণ চুপ থেকে মনোযোগ সহকারে জুমার খুতবা শুনতে হবে। প্রয়োজন হলে খুতবার আগে বা নামাজের পরে মসজিদের জন্য টাকা উঠানো যেতে পারে।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪/১০৫; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৪২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২০৬; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৪৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৭৪; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৩৮৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৫