ছোটদের সঙ্গে যেমন আচরণ করতেন মহানবী (সা.)
ছোটদের সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর আচরণ ছিল অত্যন্ত কোমল ও বিনম্র। তিনি ছোটদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতেন- সে সম্পর্কে হাদিসের কিতাবে অসংখ্য বর্ণনা এসেছে। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো—
সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসুল (সা.)-এর নিকট কিছু পানীয় উপস্থাপন করা হলো। তখন তার ডানপাশে ছিল একটা ছেলে আর বামপাশে কয়েকজন বৃদ্ধ। তিনি ডানপাশের ছেলেটিকে বললেন, তুমি কি আমাকে এই পানীয় তোমার আগে এদের দেওয়ার অনুমতি দেবে? ছেলেটি বললো, না, আল্লাহর কসম! আপনার বরকতময় হাতে প্রাপ্ত আমার অংশে আমি কাউকে অগ্রাধিকার দেবো না। তখন রাসুল (সা.) পানপাত্রটি ছেলেটির হাতে দিয়ে দিলেন।(বুখারি, হাদিস : ২৬০৫)
হাসান-হুসাইনের প্রতি স্নেহ-মমতা
শাদ্দাদ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, একবার এশারের সময় রাসুল (সা.) হাসান অথবা হুসাইন (রা.)-কে কোলে নিয়ে আমাদের নিকট আসলেন। আর নামাজের জন্য সামনে অগ্রসর হয়ে তাকে পাশে বসিয়ে দেন। তারপর তাকবির বলে নামাজ আদায় করছিলেন। নামাজের মধ্যে একটি সিজদা দীর্ঘ করেন।
বর্ণনাকারী বলেন, আমার পিতা (শাদ্দাদ) বলেছেন, সিজদায় দেরি হওয়ায় আমি মাথা উঠিয়ে দেখি- বাচ্চাটি হুজুর (সা.)-এর পিঠের ওপর বসে আছে। আর হুজুর (সা.) সিজদারত। আমি আবার সিজদায় চলে গেলাম। রাসুল (সা.) নামাজ শেষ করলে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন- হে আল্লাহর রাসুল, আজকে আপনি নামাজের মধ্যে একটি সিজদা এতো লম্বা করলেন! যার দরুন আমাদের মনে হলো, হয়তো ভিন্ন কোনো ব্যাপার ঘটে থাকবে অথবা আপনার উপর ওহি অবতীর্ণ হচ্ছে। তিনি বললেন, এর কোনোটাই ঘটেনি। বরং আমার নাতি আমাকে সাওয়ারি বানিয়েছে। তাই আমি তাড়াতাড়ি উঠিনি— যাতে সে তার কাজ করতে পারে। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১১৪১)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুল (সা.) নিজের নাতি হাসান ইবনে আলী (রা.)-কে চুমু দিলেন। তখন তার পাশে আকরা ইবনে হাবেস (রা.) বসে ছিলেন। তখন তিনি বললেন- হে আল্লাহর রাসুল, আমার দশটি পুত্র রয়েছে, আমি কোনো দিন তাদের কাউকেই চুমু দিইনি। রাসুল (সা.) তার দিকে তাকিয়ে বললেন- ‘যে দয়া করে না, সে দয়া পায় না।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৯৭)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, একবার হুজুর (সা.) দিনের বেলায় বের হলেন। তিনি আমার সঙ্গে কোনো কথা বললেন না। আমিও তার সঙ্গে কথা বলার কোনো সুযোগ পাইনি। এরপর তিনি বনু কায়নুকা বাজারে গেলেন। (সেখান থেকে ফিরে এসে) ফাতিমা (রা.)-এর ঘরের আঙিনায় গিয়ে থামলেন। আর বলতে লাগলেন, খোকা (হাসান রা.) আছে এখানে ? খোকা আছে এখানে? ফাতেমা (রা.) তাকে কিছুক্ষণ দেরি করালেন। আমার ধারণা হলো- হয়তো তাকে পুতির মালা -যা বাচ্চাদের পরানো হতো- পরাচ্ছিলেন। তারপর হুজুর (সা.) দৌঁড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলেন ও চুমু খেলেন। আর বলতে লাগলেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি তাকে (হাসানকে) ভালোবাসো এবং তাকে যে ভালোবাসে তাকেও ভালোবাসো। (বুখারি, হাদিস : ২১২২)
ছোটদের সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর রসিকতা
আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) আমাদের ঘরে আসা-যাওয়া করতেন। একবার তিনি আমার ছোটো ভাইকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু উমাইর, কেমন আছে তোমার নুগাইর? (নুগাইর একটি পাখি। উমাইর পাখিটি পুষতো এবং খেলা করতো)। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১২৯)
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়া সত্ত্বেও ছোটদের কেমন গুরুত্ব দিতেন, তা এসব হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়। তিনি কীভাবে তাদের মনোভাব মূল্যায়ন করতেন এবং তাদের সঙ্গে কোমলাচরণ করতেন— তাও স্ফুটিত হয়।
তাই, আমাদের উচিত ছোটদেরকে স্নেহ-মায়া করা। যে কোনো পরিবার কিংবা বর্ণের হোক— তাদের সঙ্গে সর্বোত্তম ব্যবহার করা সবার দায়িত্ব। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
লেখক : তরুণ আলেম ও শিক্ষক, এশাআতুল ইসলাম মাদ্রাসা, চাড়ালিয়াহাট, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।