অন্যের বউকে বিয়ে করা কি জায়েজ?

প্রশ্ন : অনলাইনে একটি মেয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এরপর কথা বলতে বলতে আমাদের প্রেম হয়ে যায়। কিন্তু কোনো কারণে কিছুদিন পর তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আমি আমার সঙ্গে যোগাযোগের সব মাধ্যম বন্ধ করে দিই।
বিজ্ঞাপন
দুই তিন বছর পর তার সঙ্গে আমার আবার কথা হয়। তখন আমি জানতে পারি- মেয়েটি বিবাহিত। আর স্বামীর সঙ্গে তার প্রায় ৫-৬ বছর ধরে যোগাযোগ নেই; তবে তার স্বামী তাকে এখনো তালাক দেয়নি। তাই তাকে আমি বলি- তার স্বামীকে তালাক দেওয়ার জন্য।
তখন সে আমাকে জানায়- তার স্বামী তার বাবা, চাচা ও অন্যান্য কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির সামনে তাকে তালাক দিয়েছে। এরপর মেয়েটি ভুল স্বীকার করে কান্নাকাটি করে। আর আমাকে বারবার বলে- আমি যেন তাকে তাড়িয়ে না দিই।
বিজ্ঞাপন
এসব কারণে মেয়েটির জন্য আমার মনে কষ্ট লাগে। তাই আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখি। এখন আমার কয়েকটি বিষয় জানা খুবই জরুরি—
এক. আমি জানি- আমার ভাই ও কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন রাজি হবে না। এরপরও আমি যদি আমার মা-বাবাকে রাজি করিয়ে তাকে বিয়ে করি— তাহলে শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো অসুবিধা আছে কি না? দুই. তার আগের বিয়ের কথা যদি আমি গোপন রাখি, তাহলে শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো অসুবিধা হবে? তিন. তার আগের স্বামী তাকে তালাক দিয়েছে কিনা— তা কীভাবে যাচাই করবো? চার. তাকে আমি বিয়ে করতে কমপক্ষে তিন বছর সময় লাগবে। তাই আমি চাচ্ছি- বড় পরিসরে কাউকে না জানিয়ে শুধু দুইজন স্বাক্ষীর সামনে আমি মেয়েকে প্রস্তাব দিয়ে বিয়ে করে নেবো। কিন্তু এভাবে করা শরিয়তসম্মত হবে? যদি হয়— তাহলে নিয়মটা কী? পাঁচ. আমি যদি মেয়েটিকে ছেড়ে দিই, তাহলে আমার কি গুনাহ হবে? একটু জানিয়ে বাধিত করবেন।
বিজ্ঞাপন
উত্তর : গায়রে মাহরাম কোনো মেয়ের সঙ্গে এভাবে প্রেম করা, অনলাইনে যোগাযোগ করা ও মোবাইলে কিংবা সরাসরি সাক্ষাতে কথা বলা মারাত্মক গুনাহ। ভবিষ্যতে এমন পাপ কাজ থেকে আপনাকে বিরত থাকতে হবে। আপনার সবগুলো প্রশ্নে উত্তর একসঙ্গে এভাবে হয়—
মেয়েটির স্বামী যদি তাকে তালাক দিয়ে থাকে, তাহলে মেয়েটির ইদ্দত তথা তিন হায়েজ (ঋতুস্রাব) অতিক্রান্ত হবার পর আপনি তাকে বিয়ে করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার পরিবার-স্বজনকে তার আগে বিয়ে হয়েছিল— একথা না বলার কারণে কোনো গুনাহ হবে না। তবে সরাসরি মিথ্যা না বলে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে হবে।
আর বিয়ের জন্য শর্ত হলো- দুইজন মুসলিম স্বাক্ষীর সামনে বর-কনের একজন বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া ও অন্যজন তা গ্রহণ করা। ব্যস, এতটুকুর মাধ্যমেই যে কারো বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায়।
আপনাদের যেহেতু অবৈধ সম্পর্কের বিয়ে। ফলে অভিভাবকদের না জানিয়ে বিয়ে করলে পরে সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই অবশ্যই বিয়ের কাবিন করে নেবেন; যাতে করে পরবর্তী সময়ে কেউ বিয়ে অস্বীকার করতে না পরে। যদিও বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য কাবিন করা শর্ত নয়।
আর যদি ওই নারীকে তার স্বামী তালাক না দিয়ে থাকে, তাহলে তাকে আপনি বিয়ে করতে পারবেন না। তাকে বিয়ে করা আপনার জন্য কোনোভাবেই জায়েজ হবে না।
এখন আপনিই সিদ্ধান্ত নিন— কী করবেন। আল্লাহ তাআলা আপনাকে গুনাহমুক্ত জীবন দান করুন। স্বচ্ছ হৃদয়ে তওবা করার তৌফিক দান করুন। দুনিয়ার সুখের উপর আখেরাতের চিরস্থায়ী জীবনকে প্রাধান্য দেবার মত ঈমানি শক্তি দান করুন।
তথ্যসূত্র : সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৮৯৩২; রদ্দুল মুহতার : ১৯৭/৫, ২৭৪/৪; বাদায়িউস সানায়ি : ৫৪৭/২; আল-বাহরুর রায়িক : ১০৮/৩; ফতোয়া হিন্দিয়্যা : ২৮০/১; ফতোয়া কাজিখান : ৩৬৬/১
ঢাকা পোস্টের ইসলাম পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। জীবনঘনিষ্ঠ প্রশ্ন ও বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ পাঠাতে মেইল করুন: dhakapostislam@gmail.com