কোরবানির পশু কেনার সময় যে চার বিষয় অবশ্যই দেখবেন
কোরবানির যেহেতু একটি ইবাদত, তাই কোরবানির পশু কেনার সময় শরিয়ত নির্ধারিত চারটি ত্রুটির দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা জরুরি। এগুলো হলো-
১। চোখে স্পষ্ট ত্রুটি থাকা: চোখ একেবারে কোটরের ভেতরে ঢুকে যাওয়া কিংবা বোতামের মত বের হয়ে থাকা কিংবা এমন সাদা হয়ে যাওয়া, এতে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে চোখে সমস্যা আছে। এমন পশু কোরবানির উপযোগী নয়।
২। সুস্পষ্ট রুগ্নতা: যে রোগের প্রতিক্রিয়া পশুর উপরে ফুটে উঠে। যেমন- জ্বর হওয়া যার ফলে পশু ঘুরতে বের হতে চায় না ও খাবারে তৃপ্তি পায় না। এমন চর্মরোগ যা পশুর গোশত নষ্ট করে দেয় কিংবা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। এমন পশু কোরবানি দেওয়া যাবে না।
৩। স্পষ্ট খোঁড়া হওয়া: যার ফলে পশুর স্বাভাবিক হাঁটা-চলা ব্যাহত হয়। এমন পশু কোরবানি হবে না।
৪। জীর্ণ-শীর্ণতা: দেখতে অসুস্থ, জীর্ণ-শীর্ণ, রোগক্রান্ত, হাড্ডিসার - এমন পশু কোরবানির উপযোগী নয়।
বারা ইবনে আযিব রা. বলেন-
أَشَارَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِيَدِهِ وَيَدِي أَقْصَرُ مِنْ يَدِهِ، فَقَالَ: أَرْبَعٌ لَا يضحى بِهِنّ الْعَوْرَاءُ الْبَيِّنُ عَورُهَا، وَالْمَرِيضَةُ الْبَيِّنُ مَرَضُهَا، وَالْعَرْجَاءُ، الْبَيِّنُ ظَلَعُهَا، وَالْعَجْفَاءُ الّتِي لَا تُنْقِي.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত দিয়ে ইশারা করেছেন- আমার হাত তাঁর হাত থেকে ছোট। তিনি ইশারা করে বলছিলেন, চার ধরনের পশু দ্বারা কোরবানি করা যায় না। যে পশুর চোখের দৃষ্টিহীনতা স্পষ্ট, যে পশু অতি রুগ্ন, যে পশু সম্পূর্ণ খোঁড়া এবং যে পশু এত শীর্ণ যে, তার হাড়ে মগজ নেই। (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৫৯১৯; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪৯৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৮০২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩১৮২)
এই চারটি মৌলিক ত্রুটি ছাড়াও এমন কিছু ত্রুটি রয়েছে যেগুলোকে এর পর্যায়ে ধরা হয়। যেমন- যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারাও কোরবানি করা জায়েয নয়। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫, আলমগীরী ৫/২৯৮)
যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কোরবানি করাও জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কোরবানি করা জায়েয। (জামে তিরমিযী ১/২৭৬, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪, আলমগীরী ৫/২৯৭)
যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কোরবানি জায়েয নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কোরবানি জায়েয। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। (জামে তিরমিযী ১/২৭৫, মুসনাদে আহমদ ১/৬১০, ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ৫/২৯৭-২৯৮)
মোট কথা কোরবানির পশু সব ধরনের ত্রুটিমুক্ত ও হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম।
হাদীসে এসেছে-
أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ ضَحّى بِكَبْشَيْنِ سَمِينَيْنِ عَظِيمَيْنِ أَمْلَحَيْنِ أَقْرَنَيْنِ مُوْجَيَيْنِ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি বড় শিংবিশিষ্ট সাদা-কালো বর্ণের হৃষ্টপুষ্ট খাসি দুম্বা জবাই করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৫০৪৬; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩১৫৯)
এএ