মায়ের কাছে ৮ মাসে হাফেজ হলো ৮ বছরের শিশু!
ছোট্ট শিশু মুয়াজ। বয়স সবেমাত্র আটের গণ্ডিতে পড়েছে। তবে এটুকু বয়সেই সে পুরো পবিত্র কোরআন হিফজ বা মুখস্ত করেছে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি সে এমন বিরল অর্জনের স্বাক্ষর রেখেছে।
মুয়াজের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানায়। সেখানকার ছিলনী গ্রামের হাফেজ মাহবুবুর রহমান তার বাবা। আনন্দ-স্ফুটিত মুয়াজের দুই চোখে এখন বইছে অর্জনের বাঁধভাঙা হাসি। পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজন ছাড়াও এলাকার লোকজন তাকে দেখতে আসছে। ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করে অনেকে তাকে কোলে নিয়ে স্নেহও করছেন। রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) তাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে।
তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোরআন প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে গিয়ে তিলাওয়াত শুনে মুগ্ধতা তৈরি হয় মুয়াজের তনুমনে। সেখান থেকে ফিরে এসে বাবা-মাকে নিজের আগ্রহ ও মুগ্ধতার কথা জানায়। এরপর মুয়ার কাছে কোরআন হিফজ শুরু করে। আর মাত্র ৮ মাসেই পুরো কোরআন মুখস্ত করে নেয়— আট বছরের শিশু আবরারুল হক মুয়াজ।
মুয়াজের চাচা হাফেজ মাহমুদুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন—
মুয়াজকে নিয়ে তার বাবা একদিন কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শহিদী মসজিদপ্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় যান। প্রতি বছর আল-জামিয়াতুল ইমদাদিয়া কর্তৃপক্ষ সেখানে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। সেখানে তন্ময় হয়ে ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের কোরআন তিলাওয়াত শোনে মুয়াজ। বাসায় ফিরে বাবা-মার কাছে ততক্ষণাৎ সে হাফেজ হবে বলে— আগ্রহ প্রকাশ করে।
মাহমুদুল হাসান ঢাকা পোস্টকে আরো জানান, হিফজ শুরু করার কিছুদিন পরই দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যায়। এসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সুযোগটা আরও ভালোভাবে কাজে লাগানো হয়। মুয়াজের মা হাফেজা হওয়ায় ঘরে বসেই সে পুরো কোরআন মুখস্ত করতে থাকে। এভাবে নিজেকে অনেক দূর এগিয়ে নেয়। পরে আজ ২০ ফেব্রুয়ারি শেষ সবক (পাঠ) প্রদান করে।
তিনি আরও বলেন, মুয়াজের হাফেজ হওয়ার পেছনে তার মায়ের অসামান্য অবদান রয়েছে। তার মা মুয়াজকে কোলে নিয়ে নিয়মিত কোরআন পড়তেন। ওই সময় থেকেই মুয়াজের আগ্রহ জন্মেছিল।
মুয়াজের রত্নগর্ভা মা হাফেজা আলেমা কামরুন নাহারের জন্য ব্যাপারটি বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ, এতো অল্প সময়ে ঘরে রেখে সন্তানকে হাফেজ করা চাট্টিখানি বিষয় নয়। এপ্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমার ছেলে মুয়াজ শৈশব থেকেই মেধাবী বলে আমি ধারণা করেছি। তার ছোট-কোমল হৃদয়ে পবিত্র কোরানের তিলাওয়াতের গুনগুন সুর গেঁথে যেত। এজন্য আমি তাকে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা কায়দা দিয়ে রাখতাম। বাসায় বসে পড়াতাম। এভাবে কোরআনের প্রতি তার আকৃষ্টতা বাড়তে থাকে। তখন আমি মুয়াজের বাবার সঙ্গে কথা বলে তাকে হিফজ করানো শুরু করে দিই। শেষে নিজের আগ্রহে ও আল্লাহর রহমতে সে খুব দ্রুত হিফজ সম্পন্ন করেছে। আলহামদুলিল্লাহ।
মুয়াজের অল্পবয়সে হাফেজ হওয়ায় আনন্দিত ছিলনী গ্রামের লোকজনও। হাওরের কাদামাটি ছাওয়া অঞ্চলে জন্ম নেওয়া মুয়াজ অঁজপাড়া গ্রামে গৌরব বয়ে এনেছে বলে মন্তব্য করেন তারা।