মাগরিবের আজানের পর নফল নামাজ পড়া যাবে কি?
মাগরিবের আজানের পরে ফরজ নামাজের আগে নফল নামাজ পড়ার হুকুম কী? এবিষয়ে এক আলেমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, পড়া যাবে; কেননা বিভিন্ন সাহাবিরা পড়েছেন।
অন্য একজনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, মাকরূহে তানযিহী-এর সাথে হবে; কেননা খুলাফায়ে আরবাআসহ উল্লেখযোগ্য কোনো সাহাবি পড়েননি। এ বিষয়ে শরয়ি সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
এই প্রশ্নের উত্তর হলো- মাগরিবের আজান ও ইকামতের মাঝে সুন্নত বা মুস্তাহাব পর্যায়ের কোনো নামায নেই। এ সময় আল্লাহর রাসুল (সা.) কোনো নামাজ পড়েছেন- এরকম স্পষ্ট কোনো সহিহ বর্ণনা নেই। সহিহ বর্ণনা অনুযায়ী খোলাফায়ে রাশেদিনও এ সময় কোনো নামাজ পড়তেন না। অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামও সাধারণত এ সময় নামাজ পড়তেন না।
এক বর্ণনায় এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে মাগরিবের ফরজের পূর্বে দুই রাকাত নামাজ পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর যুগে কাউকে উক্ত নামায পড়তে দেখিনি। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১২৮৭)
সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ.-এর এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, ‘মুহাজির সাহাবিগণ মাগরিবের আগে দুই রাকাত নামাজ পড়তেন না, আর আনসার সাহাবিগণ তা পড়তেন। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, বর্ণনা : ৩৯৮৪)
আরেক বর্ণনায় এসেছে, সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব (রহ.) বলেন- ‘আমি সাদ ইবনে আবি ওয়াককাস রা. ছাড়া আর কোনো ফকিহকে মাগরিবের আগে নামাজ পড়তে দেখিনি।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, বর্ণনা : ৭৪৬৪)
ইবরাহীম নাখায়ি (রহ.) বলেন, ‘আবু বকর, উমর ও উসমান রা. মাগরিবের পূর্বে দুই রাকাত নামাজ পড়তেন না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা : ৩৯৮৫)
হাম্মাদ বিন আবি সুলাইমান (রহ.) বলেন- আমি ইবরাহিম নাখায়ি (রহ.)-কে মাগরিবের পূর্বে নফল নামাজ পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে তা পড়তে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবু বকর, উমর রা. এই নামায পড়তেন না। (কিতাবুল আছার : ১/১৬৩)
সুফিয়ান ছাওরি (রহ.) বলেন, আমার মতও ইবরাহীম নাখায়ির মতই। (সুনানে বায়হাকি : ২/৪৭৬)
সুতরাং খোলাফায়ে রাশেদিনসহ সাহাবা এবং তাবেয়িদের অনেকেই যেহেতু এ সময় নফল পড়তেন না এবং এ সময় নফল নামাজের বিশেষ কোনো ফযিলতও হাদিসে বর্ণিত নেই। অন্যদিকে আজানের পর বিলম্ব না করে দ্রুত মাগরিব পড়ার কথা অন্যান্য হাদিসে এসেছে। তাই এসব বিষয়ের উপর ভিত্তি করে হানাফি, মালেকি ও হাম্বলি মাজহাবের ফকিহগণ উক্ত দুই রাকাত নফল নামাজকে সুন্নত বা মুস্তাহাব পর্যায়ের আমল হিসেবে গণ্য করেননি। হানাফি মাজহাবের পূর্ববর্তী ফকিহগণের মতে এ সময় নামাজ পড়া মাকরূহে তানযিহী তথা অনুত্তম। মালেকি মাজহাবের ফকিহগণও এ সময় নামায পড়াকে মাকরূহ বলেছেন। হাম্বলি মাজহাবের কোনো কোনো ফকিহ থেকেও এমনটি বর্ণিত আছে।
তবে মনে রাখতে হবে, এটি একটি শাখাগত মাসআলা। এতে ভিন্ন মতও রয়েছে। কোনো কোনো সাহাবি এ সময় নামাজি পড়েছেন- এটিও প্রমাণিত আছে। তাই অন্য মাযহাবের কাউকে এ সময় নামায পড়তে দেখলে আপত্তি করা ঠিক নয়।
তথ্যসূত্র : আলমাবসূত, সারাখসি : ১/১৫৭, ১৭৫; তুহফাতুল মুলূক পৃষ্ঠা : ৫৯; আলইখতিয়ার : ১/৪১; তাবয়িনুল হাকায়েক : ১/৮৭; আশশারহুল কাবির, দরদের ১/১৮৭; হাশিয়াতুশ শিলবী ১/১৮১; হাশিয়াতুস সাবি আলাশ শারহিস সাগির : ১/৯০; আল-ইনসাফ, মারদাবি : ১/৪২২; ইলাউস সুনান : ২/৬৮