দুবাইয়ে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন
পশ্চিম এশিয়ায় প্রথম এবং ৯ম বৈদেশিক মিশন হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যিক রাজধানী দুবাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলো ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম।
বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ খায়রুল আলম শেখ।
দুবাই কনস্যুলেটের প্রথম সচিব (পাসপোর্ট ও ভিসা) মোহাম্মদ কাজী ফয়সালের পরিচালনায় ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবু জাফর। এতে সভাপতিত্ব করেন দুবাই ও উত্তর আমিরাত বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক মুহাম্মদ সারওয়ার আলম এবং ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম সালাহ উদ্দিন।
রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে বলেন, ই-পাসপোর্টে পেইজ ও মেয়াদ যত বেশি হবে দিরহাম তত বেশি লাগবে। তাই আপনার যদি কিছুদিন পর পর দেশে যেতে না হয় তাহলে আপনি ৪৮ পেইজ এবং ১০ বছরের মেয়াদ সিলেক্ট করতে পারেন। এতে আপনার দিরহামও কম লাগবে এবং পাসপোর্টের মেয়াদও বেশিদিন থাকবে। যদি শুধু এক দুই বার দেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করে থাকেন তাহলে ৪৮ পেইজ এবং ৫ বছর মেয়াদ সিলেক্ট করুন। যাদের কিছুদিন পর পর দেশে যেতে হয় তারা ৬৪ পেইজ এবং পাঁচ বছর মেয়াদ সিলেক্ট করতে পারেন। কেননা, ৬৪ পেইজে আপনার দশ বছর যাবে না। কারণ আপনাকে কিছুদিন পরপর বাইরের দেশে যেতে হবে।
এছাড়া ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা, কনস্যুলেটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত প্রবাসী সাংবাদিক, বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যরা এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
এতে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৬২ সালে একটি পরিদফতর হিসেবে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের যাত্রা শুরু হয়। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় ১৯৭৩ সালে এটি অধিদফতরের মর্যাদা পায়। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ২০১০ সালে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট সংক্রান্ত কার্যক্রমে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে।
ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অথরিটির গাইডলাইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ও মেশিন রিডেবল ভিসার কার্যক্রম শুরু হয়। ভিশন ২০২১ এর স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ও সুযোগ্য নেতৃত্বে ২০২০ সালে বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক পাসপোর্টের স্বপ্নযুগে প্রবেশ করে।
নাগরিকরা তার সুবিধামতো পাঁচ ও দশ বছর মেয়াদে ৪৮ ও ৬৪ পৃষ্ঠার ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এ পাসপোর্টের চিপে নাগরিক তথ্য ছাড়াও থাকবে ফিঙ্গার প্রিন্ট, ফেস ইমেজ, চোখের আইরিসের তথ্য ও স্বাক্ষর। পলিকার্বোনেট ডাটা পেইজে থাকছে নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব ও ব্যক্তিগত তথ্যের সম্মিলন। ৩৮টি নিরাপত্তা ফিচার সম্বলিত ই-পাসপোর্ট বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি অনন্য সংযোজন।
প্রথম পর্যায়ে শুধু সাধারণ আবেদন গ্রহণ করা হবে। ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদনের সময়ে ব্রাউজার হিসেবে গুগল ক্রোম ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া যথাযথ বারকোড প্রাপ্তির জন্য আবেদনকারীর কম্পিউটারে অ্যাডোবি অ্যাক্রোব্যাট রিডার ডিসির সর্বশেষ সংস্করণ ইন্সটলড থাকা প্রয়োজন।
ই-পাসপোর্টের আবেদনের জন্য কোনো কাগজপত্র সত্যায়ন করার প্রয়োজন হবে না। ফরমে কোনো ছবি সংযোজন বা সত্যায়নেরও প্রয়োজন হবে না। জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী আবেদন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপরেখার আলোকে বাংলাদেশ ও বিদেশের বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, দুবাইয়ে ই-পাসপোর্ট চালুর ফলে এখানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট সংক্রান্ত প্রক্রিয়া সহজতর ও নিরাপদ হবে। ই-পাসপোর্ট প্রক্রিয়ায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হওয়ায় এর বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি স্বাক্ষরে আগ্রহী হবে। ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পাসপোর্টের মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।
অনলাইনে www.epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে আবেদন দাখিল করে আবেদনপত্র প্রিন্ট ও স্বাক্ষর করতে হবে। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং পেশার সনদসহ কনস্যুলেটে ই-পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত ফি পরিশোধপূর্বক আবেদন করতে হবে।
কোন পাসপোর্টের জন্য কত দিরহাম ফি দিতে হবে
৪৮ পৃষ্ঠা ও পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য:
সাধারণ আবেদনকারী : সাধারণ ৪০৫, জরুরি ৬১০। শিক্ষার্থী ও সাধারণ শ্রমিক : সাধারণ ১২৫, জরুরি ১৮৫ দিরহাম।
৪৮ পৃষ্ঠা ও দশ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য:
সাধারণ আবেদনকারী : সাধারণ ৫১০, জরুরি ৭১০। শিক্ষার্থী ও সাধারণ শ্রমিক : সাধারণ ২০৫, জরুরি ৩০৫ দিরহাম।
৬৪ পৃষ্ঠা ও পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য:
সাধারণ আবেদনকারী : সাধারণ ৬১০, জরুরি ৮১০। শিক্ষার্থী ও সাধারণ শ্রমিক : সাধারণ ৬১০, জরুরি ৮১০ দিরহাম।
৬৪ পৃষ্ঠা ও দশ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য:
সাধারণ আবেদনকারী : সাধারণ ৭১০, জরুরি ৯১০। শিক্ষার্থী ও সাধারণ শ্রমিক : সাধারণ ৭১০, জরুরি ৯১০ দিরহাম।
এসএসএইচ