কানাডায় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা ও সনদপত্র প্রদান
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে কানাডার ক্যালগেরির বাংলাদেশ সেন্টারে ব্যতিক্রমী এক আয়োজনের মাধ্যমে প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে লাল-সবুজের মহা উৎসবে বিরল সম্মান জানাল প্রবাসী বাঙালিরা।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। বাতাসে লাশের গন্ধ, আগুনে পুড়ে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন গ্রামের পর গ্রাম, বাবার সামনে মা আর মেয়ের শ্লীলতাহানি, ঘরে অশীতিপর বৃদ্ধের ঘাড়ে বেয়নেটের আঘাত, প্রতিবেশীদের চিৎকার আর আর্তনাদে ভারী হয়ে যাওয়া সেই লোমহর্ষক মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে অনেকেই অশ্রুসিক্ত আর আবেগে বিমর্ষ হয়ে পড়েন কানাডার ক্যালগেরিতে বসবাসরত প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধারা। বিদেশের মাটিতে প্রবাসীরা ক্ষণিকের জন্য হলেও ফিরে গিয়েছিলেন একাত্তরের সেই রণাঙ্গনে। অনাড়ম্বর এ অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে চরমপত্র, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসার অপেক্ষায় কীভাবে শক্তি সঞ্চার করে যুদ্ধ করেছিলেন তার বর্ণনা তুলে ধরেন।
বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানেন না মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে এবং বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ও বাঙালি সত্তাকে তুলে ধরাই ছিল অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য।
অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন ক্যালগেরির এবিএম কলেজ এবং আলবার্টার প্রথম বাংলা অনলাইন পোর্টাল প্রবাস বাংলা ভয়েস। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই দুই দেশের জাতীয় সংগীত এবং বঙ্গবন্ধুসহ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক ক্যালগেরি এবিএম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ড. মো. বাতেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি মো. রশিদ রিপন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত বসু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শুভ মজুমদার।
অনুষ্ঠানে যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জেল হোসেন পিন্টু, মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মাহফুজুল হক মিনু, নাজিম আহমেদ, মেজর মইনুল ইসলাম, মোহাম্মদ আবদুর রউফ এবং সুফল চন্দ্র বৈরাগীকে সম্মাননা ও সনদপত্র প্রদান করেন যথাক্রমে এবিএম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ড. মো. বাতেন ও বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি মো. রশিদ রিপন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এবিএম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ড. মো. বাতেন, বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি মো. রশিদ রিপন, প্রকৌশলী মো. কাদির, প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম রিপন, প্রকৌশলী আবদুল্লা রফিক, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব রুপক দত্ত, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব কিরন বনিক শংকর এবং শুভ মজুমদার।
বিশিষ্ট কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান বলেন, একটি উন্নত আর সমৃদ্ধ সমাজের স্বপ্ন নিয়ে আজ আমরা প্রবাসী হলেও হৃদয়ে আমাদের আজন্ম লালিত স্বপ্ন সুখী, সমৃদ্ধ, বৈষম্যহীন, একটি অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ। তাই তো মহাকাশে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট আমাদের শিহরিত করে, ভয়াল পদ্মার বুকে দীর্ঘতম সেতু আমাদের আনন্দে উদ্বেলিত করে। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নামে বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারে আমরা বিক্ষুব্ধ হই। শাল্লা, নাসির নগর, কুমিল্লা, ফেনী আর রংপুরে সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বর আক্রমণে আমরা প্রতিবাদে ফেটে পড়ি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর কল্পিত বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক, দুর্নীতিমুক্ত সমাজব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য একাত্তরের মতো দৃপ্ত শপথে এগিয়ে যেতে পারলে সেটিই হবে শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন।
অনুষ্ঠানের আয়োজক এবিএম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ বাতেন বলেন, বাঙালির জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবময় ডিসেম্বর মাসেই বাঙালি পেয়েছিল বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা, পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়ে ৯ মাসের ত্যাগ-তিতিক্ষার পর পৃথিবীর বুকে এ মাসেই রচিত হয়েছিল এক অমর গাঁথা– বাঙালির স্বাধীনতা, একটি মানচিত্র, একটি পতাকা।
তিনি আরও বলেন, সেদিন এ পতাকাকে সমুন্নত রাখতে যারা নিজেদের জীবন বাজি রেখেছিলেন, তাদের অনেকেই আমাদের মধ্যে নেই, যারা বেঁচে আছেন তাদের বিরল সম্মান দেখানোর মাধ্যমে আমরা সমগ্র বাংলাদেশকে সম্মান দেখাতে চাই।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক প্রবাস বাংলা ভয়েসের প্রধান সম্পাদক আহসান রাজীব বুলবুল বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এ অনুষ্ঠান নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তুলে ধরতে বিরাট ভূমিকা পালন করবে।
এসএসএইচ