দূতাবাসের অর্ধেক কর্মী করোনায় আক্রান্ত, পাসপোর্ট নিতে হবে ডাকযোগে
মালয়েশিয়ায় চলছে দুই সপ্তাহের কড়া লকডাউন। যাতায়াত একেবারে বন্ধ থাকলেও সেবা কার্যক্রম চালু রেখেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
মালয়েশিয়ায় চলমান কড়া লকডাউনের নবম দিন অতিবাহিত হচ্ছে। লকডাউনের মাঝেও থেমে নেই বাংলাদেশ দূতাবাসের পাসপোর্ট ও কন্স্যুলার সেবা। করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই চলছে সেবা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে পাসপোর্ট শাখার ৫০ ভাগ স্টাফ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতেও প্রবাসীদের প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে দূতাবাসের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়নি। তবে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পোস্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য দূতাবাস থেকে বুধবার (৯ জুন) একটি জরুরি নোটিশ জারি করা হয়েছে।
দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, এই কঠোর লকডাউনের মধ্যেও প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ জন পাসপোর্ট সেবা নিচ্ছেন। এ জন্য দূতাবাসে আসার আগে অন্যান্য দূতাবাসের মত অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে আসতে হয় না। সেবার দরজা খোলা। জরুরি যোগাযোগের জন্য এ সময়ে পাসপোর্ট সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানার থাকলে সোমবার থেকে শুক্রবার অফিস চলাকালীন সময়ে হাইকমিশনের ০১৪৯৪৪৭০৪৪, ০১০২৮৩৪০৬২, ০১৭৪০৮৬০১৪, ০১৩৯১২৩১০৬, ০১৬৩০৭২৪৩৮, ০১১২৫৭৪৭০৭৭ এই নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। যদিও প্রবাসীদের অভিযোগ ফোনে পাওয়া যায় না।
এ মুহূর্তে মালয়েশিয়ায় চলমান রিক্যালিব্রেশন অর্থাৎ বৈধকরণ চলছে। সাধারণত অবৈধ প্রবাসীরা এই সুবিধা নিচ্ছেন। ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, ১ লাখ ৫০ হাজারের অধিক বিদেশি নাগরিক এই কর্মসূচির আওতায় নাম নিবন্ধন করে ৮০ হাজারের মত বৈধতা পেয়েছে। এর মধ্যে ৬০ হাজারের মত অবৈধ অভিবাসী নিজ দেশে ফিরে গেছেন ও অন্যদের বিষয়গুলো প্রক্রিয়াধীন।
ইমিগ্রেশনের ফেসবুক পেজে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে,কঠোর লকডাউনের মধ্যেও ১ জুন থেকে ১৪ জুন রিক্যালিব্রেশন এর কাজ চলমান থাকবে। তবে প্রবাসীদের প্রত্যাশা ৩০ জুন পর্যন্ত এর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে।
ইতোমধ্যে বৈধকরণ কর্মসূচির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য মালয়েশিয়া সরকারের নিকট হাইকমিশন অনুরোধ করেছে বলে হাইকমিশনের একটি সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত বছরের নভেম্বরে রিক্যালিব্রেশন কর্মসূচি ঘোষণার পর দুই সপ্তাহের মধ্যেই হাইকমিশনে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ১ লাখ ১০ হাজার পাসপোর্ট আবেদন জমা পড়ে। কিন্তু সীমিত জনবল ও যন্ত্রপাতি দিয়ে অতি দ্রুত প্রসেস করে কুয়ালালামপুর থেকে এমআরপি সার্ভিসের মাধ্যমে অনলাইনে পাসপোর্টের তথ্যাদি ঢাকায় প্রেরণ করলেও ঢাকা থেকে সময় মত প্রিন্ট হয়ে পাসপোর্ট মালয়েশিয়ায় না আসার কারণে প্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। রেমিটেন্স যোদ্ধারা আশায় রয়েছেন আগের মতো দ্রুত পাসপোর্ট হতে পেয়ে বৈধতার সুযোগ নেবেন ও অন্যরা ভিসা নবায়ন করে নেবেন।
এদিকে আগের লেভি সিস্টেমে ভিসা নবায়ন অব্যাহত থাকায় প্রবাসীদের মাঝে স্বস্তি এসেছে। তবে করোনার কারণে ভিসা নবায়নের ধীর গতি লক্ষণীয়। এ বিষয়ে হাইকমিশন কাজ করছে বলে জানা গেছে।
করোনা পরিস্থিতি অবনতির প্রেক্ষিতে হাইকমিশনে এসে জেমকন পাসপোর্ট আবেদন না করে ডাকযোগে পাঠিয়ে দিচ্ছেন আবেদনকারীরা। একইভাবে ডাকযোগে পাসপোর্ট দেওয়া শুরু করেছে হাইকমিশন। সীমিত আকারে শুরু করা এই কার্যক্রম সমগ্র মালয়েশিয়া জুড়ে চালু করা হবে বলে পাসপোর্ট ও ভিসা শাখার কাউন্সেলর মো. মশিউর রহমান তালুকদার জানিয়েছেন।
তিনি জানান, করোনা ভাইরাসের শুরু থেকেই এই প্রক্রিয়া ও অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদনের তথ্যাদি জানার উন্মুক্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে কেউ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঘরে বসেই জেনে নিতে পারছেন আবেদনের কী অবস্থা, ডাকযোগে পাসপোর্ট পাওয়ার পদ্ধতি।
তিনি জানান, কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই হাইকমিশন গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত ১ লাখ ১৫ হাজার পাসপোর্ট বিতরণ করেছে। সম্প্রতি নতুন চালু হওয়া (পাইলট প্রজেক্ট) পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে এপ্রিল থেকে ৮ জুন পর্যন্ত ১০ হাজার পাসপোর্ট ডেলিভারি করা হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার পোস্ট অফিস সার্ভিস উদ্বোধনের সময় বলেছিলেন, প্রাথমিকভাবে এই সেবা মালয়েশিয়ার ছয়টি প্রদেশে চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব প্রদেশে চালু করা হবে। পাসপোর্ট প্রাপ্তির প্রক্রিয়া আরও দ্রুত করা হবে।
ডাকযোগে পাসপোর্ট পেতে হলে
দুই সপ্তাহের কড়া লকডাউনে রাজধানীর কুয়ালালামপুর জিপিও-৫০৬৭০, কেপংয়ের জিনজাং-৫২০০০, সুঙ্গাই ওয়াং-৫০২৫০, শাহ আলম জিপিও-৪০৬৭০, বান্দার বারু বাঙ্গি-৪৩৬৫০, রাওয়াং-৪৮০০০, কাজাং-৪৩০০০, ক্লাং-৪১৬৭০, মেলাক্কা জিপিও-৭৫৬৭০, জহুরের তাংকাক-৮৪৯০০ ও সেরেম্বান জিপিও-৭০০০০ পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাসপোর্ট সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে এই পোস্ট অফিসগুলো থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ডাকযোগে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে https://appointment.bdhckl.gov.bd/poslaju-এই ঠিকানায় প্রবেশ করে তথ্য পূরণ করে আবেদন করতে হবে। আবেদনের ২ কর্মদিবস পর লিংকে পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ নম্বর বসিয়ে সার্চ অপশনে ক্লিক করলে স্বয়ংক্রিয় একটি ট্র্যাকিং নম্বর/বারকোড প্রদর্শন হবে। আর ওই ট্র্যাকিং নম্বর/বারকোড দিয়ে https://www.pos.com.my লিংকে Track and Trace অপশনে সার্চ করলে উক্ত পাসপোর্টের হালনাগাদ সম্পর্কে জানা যাবে।
সেবাপ্রত্যাশীরা পছন্দ অনুযায়ী নির্ধারিত পোস্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহের সময় অবশ্যই পুরাতন মূল পাসপোর্ট অথবা পাসপোর্ট ফটোকপি এবং ছবিযুক্ত আইডি কার্ড নিয়ে উপস্থিত থেকে নিজের পাসপোর্ট নিজেই সংগ্রহ করতে হবে।
এছাড়া মালয়েশিয়ার মূল ভূখন্ডের মধ্যে যারা বসবাস করছেন তাদের ১২ রিঙ্গিত ও সাবাহ সারওয়াকে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ২০ রিঙ্গিত সার্ভিস চার্জ দিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে বলে জানিয়েছেন হাইকমিশনের পাসপোর্ট ও ভিসা শাখার কাউন্সিলর মো. মশিউর রহমান তালুকদার।
ওএফ