ডিসেম্বরের বিজয়ের স্মৃতিতে উঠে এলো জুলাই বিপ্লবের গৌরব
দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। রাতে অনুষ্ঠিত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের আলোচনার স্মৃতিচারণে অধিকাংশ বক্তার মুখেই উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির পাশাপাশি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া জুলাই বিপ্লবের সাহসী গল্পের প্রসঙ্গ।
বক্তারা বলেন, ৭১’ এ যে শোষণ, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাক স্বাধীনতা ও কোনো গোষ্ঠীর পরাধীনতার বিরুদ্ধে জনমানুষের ক্ষোভ থেকে যে যুদ্ধে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় এনেছিল, ঠিক তেমনি বৈষম্যহীন সমাজ, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্যই ছাত্রজনতার বিপ্লবী গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসন থেকে দেশকে মুক্ত করে আরেক গৌরবের বিজয় এসেছে ২০২৪ সালে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে সোমবার সকালে দূতাবাসের সামনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে পতাকা উত্তোলন করেন কোপেনহেগেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ কে এম শহিদুল করিম। এ ছাড়া সন্ধ্যা ৫টায় দূতাবাসে আলোচনা সভা, দোয়া-মোনাজাত ও নৈশভোজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও ডেনমার্কে অবস্থানরত রাজনীতিবিদ, বিভিন্ন পেশাজীবী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন
দূতাবাসের মিনিস্টার ও দূতালয় প্রধান মুহাম্মদ সাকিব সাদাকাতের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত এ কে এম শহিদুল করিম ছাড়াও বক্তব্য দেন ডেনমার্ক বিএনপির সভাপতি ও দলটির কেন্দ্রীয় সদস্য গাজী মনির আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, বিএনপি নেতা বেলায়েত হোসেন বাবুল, সোনিয়া সারোয়ার, গোলাম সারোয়ার, আরিফ তালুকদার, কৃষিবিদ বদিউজ্জামান শেখ মামুন, ইমাদ আহমেদ, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। এ ছাড়া দূতাবাসের কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান, মোসা. কানিজ ফাতিমা ও মিস ফারজানা আফরোজ যথাক্রমে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন।
রাষ্ট্রদূত এ কে এম শহিদুল করিম বলেন, ১৯৭১ সালে যে স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মানুষ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন মূলত একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়ার জন্য। সেই ঐক্যবদ্ধ শক্তি নিয়েই দেশের ছাত্র-জনতা জুলাই-আগস্টে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার বিপ্লব সাধন করেছে। সেই বিপ্লব পরবর্তী বর্তমান সরকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে খুব দ্রুতই নির্বাচন ও গণতন্ত্রের দিকে ধাবিত হবেন। আমাদেরকে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।
গাজী মনির আহমেদ বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজ ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা ও গুম-খুন, লুটপাটের বিরুদ্ধে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে উৎখাত করে দেশে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আমাদেরকে সজাগ থেকে দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে যে ষড়যন্ত্র চলছে তা প্রতিহত করতে হবে।
সোনিয়া সারোয়ার বলেন, আমরা যখন এখানে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণ করছি আজকের বিজয় দিবসে তেমনি ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনে দুই সহস্রাধিক শহীদের বিনিময়ে যে বিজয় এসেছে, সে বিজয়ের বীর শহীদদেরও স্মরণ রাখতে হবে। কারণ ৭১-এ ভোটাধিকার, বাক স্বাধীনতা ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে জনমানুষের ক্ষোভ থেকে যে যুদ্ধ পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় এনেছিল, ঠিক তেমনি বৈষম্যহীন সমাজ, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্যই ছাত্র-জনতার বিপ্লবী গণঅভ্যুত্থান স্বৈরশাসন থেকে দেশকে মুক্ত করে আরেক গৌরবের বিজয় এনেছে।
এসএসএইচ