বিভিন্ন পেশায় কুয়েতে যেতে আগ্রহীদের সচেতনতায় দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তি
কুয়েতে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশি এবং দেশ থেকে বিভিন্ন পেশায় কুয়েতে আসতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের অবগতি ও সচেতনতার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাস।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দূতাবাসের ফেসবুক পেজে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশি কর্মীরা অসীম আগ্রহ সহকারে কাজের উদ্দেশ্যে কুয়েতে আগমন করলেও অনেক ক্ষেত্রে কুয়েতে আগমনের সঠিক পন্থা বা তথ্য না জানার কারণে এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী/দালাল কর্তৃক কুয়েতে আসতে আগ্রহী বহুসংখ্যক বাংলাদেশি জনগণ বিভ্রান্ত ও বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন।
কুয়েতে একজন প্রবাসী কর্মীর মাসিক সর্বনিম্ন বেতন ৭৫ কুয়েতি দিনার। কুয়েতের বিভিন্ন কোম্পানিতে আগত বাংলাদেশি কর্মীদের কোম্পানি কর্তৃক হোস্টেলে থাকার সুবিধা প্রদান করা হলেও কর্মীর খাওয়ার খরচ, মোবাইল ফোন ও ব্যক্তিগত ব্যয় ভার মেটানো বাবদ প্রতি মাসে আনুমানিক ন্যূনতম ৩০ কুয়েতি দিনার ব্যয় হয়ে থাকে। কুয়েতে প্রবাসী কর্মীর প্রতি বছর ইকামা (বসবাসের অনুমতি) নবায়ন বাবদ সরকারি ফি ৬০ কুয়েতি দিনার এবং কর্মীর ইকামা বিদ্যমান প্রজেক্ট থেকে অন্য প্রজেক্টে স্থানান্তর বাবদ সরকারি ফি ৩৬০ কুয়েতি দিনার কোম্পানি কর্তৃক প্রদেয় হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোম্পানি এ ধরনের ফি কর্মীর কাছ থেকে আদায় করে থাকে মর্মে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন
কুয়েতে কোনো কোনো প্রজেক্টের মেয়াদ ১ বছর বা তার কম থাকলেও বাংলাদেশ থেকে আসার পূর্বে অনেক ক্ষেত্রেই কর্মীকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয় না। ফলে বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে আগত কর্মীরা কুয়েতে আসার ১ বছর বা তারও কম সময়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইকামাহীন হয়ে যান। ফলে কর্মী যে পরিমাণ অর্থ খরচ করে বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে আগমন করেন, এক বছর বা তার কম সময়ে সে পরিমাণ অর্থ চাকরির বেতন থেকে আয় করতে সক্ষম হন না। উপরন্তু প্রতি বছর ইকামা নবায়ন ফি ৬০ কুয়েতি দিনার বা নতুন প্রজেক্টে ইকামা স্থানান্তর বাবদ ৩৬০ কুয়েতি দিনার পরিশোধের কারণে অর্থ সংকটে নিপতিত হন। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে আগত কর্মীদের কোম্পানি/কর্মস্থলে নিজ নিজ কাজের মেয়াদ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করা এবং চুক্তিপত্রের কপি নিজের কাছে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।
কুয়েতের বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী একজন প্রবাসী কর্মীকে সুনির্দিষ্ট নিয়োগকর্তা (কাফিলের) অধীনে সুনির্দিষ্ট কর্মস্থলে কাজ করতে হয় এবং চুক্তির মেয়াদ শেষে তাকে স্বদেশে ফিরে যেতে হয়। বর্তমানে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি ‘ব্যক্তিগত কাফিল’ (ভিসা-২০) বা ‘ছোট কোম্পানি’ (ভিসা-১৮) এর অধীনে একক ভিসা নিয়ে তথাকথিত ‘ফ্রি ভিসায়’ কুয়েতে আগমন করছেন। অনেক মানুষ পরিচিত ব্যক্তি বা আত্মীয়ের মাধ্যমে তথাকথিত ‘ফ্রি ভিসা’ ক্রয় করে কুয়েতে আসছেন। এটাও পরিলক্ষিত হচ্ছে যে কিছু কিছু কাফিল ‘ফ্রি ভিসার’ নামে বাংলাদেশি দালালদের সঙ্গে ভিসা বিক্রির ব্যবসা করছে এবং কুয়েতে আগমনের কিছু দিন পরেই কর্মীর ইকামা বসবাসের অনুমতি বাতিল করে তার স্থলে অন্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দিচ্ছে। ফলে এ প্রক্রিয়ায় কুয়েতে যারা আসছেন তাদের কাজের কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। অনেকে কাজ না থাকার কারণে বেকার বসে থাকেন বা বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। কুয়েতের আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি নির্ধারিত কর্মস্থলের বাইরে অন্যত্র কাজ করলে কুয়েতের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায় বা দেশে ডিপোর্ট করে। অবৈধভাবে কুয়েতে অবস্থানকারী বাংলাদেশি কোনো ব্যক্তিকে গোপনে কোনো কুয়েতি ব্যক্তি নিয়োগ দিলেও তাদের অত্যন্ত নিম্ন মজুরি প্রদান করে থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের ওপর শারীরিক অত্যাচারের ঘটনাও ঘটছে। এর ফলে ব্যক্তির শারীরিক ও অর্থ ক্ষতি ছাড়াও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
বর্ণিতাবস্থায় কুয়েতে কাজের উদ্দেশ্যে আগমনে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের কুয়েতে আসার জন্য তথাকথিত ‘ফ্রি ভিসা’ পরিহার করা উচিত। তদুপরি যেকোনো বাংলাদেশি ব্যক্তিকে কুয়েতে আগমনের পূর্বে তার নিয়োগকর্তা (কাফিল), সুনির্দিষ্ট কর্মস্থলের নাম ও ঠিকানা, কাজের চুক্তির মেয়াদ ও বেতন-ভাতা ইত্যাদি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে কুয়েতে আসার জন্য অনুরোধ করা হলো।
এসএসএইচ