ছাত্র আন্দোলনে সংহতি : প্রবাসীদের বিপদে ফেলতে চেয়েছিল একটি চক্র
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রসমাজের পাশাপাশি যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে অবস্থানরত সব শ্রেণিপেশার মানুষ। এসময় ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের দমনপীড়নের কঠোর সমালোচনা করেন বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা। সরাসরি তারা ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতে না পারলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছিলেন বেশ সরব।
আন্দোলনে ছাত্রদের উৎসাহ প্রদান করতে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট দিতে দেখা যায় কুয়েতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের। সেখানে তারা ছাত্রদের ওপর অমানবিক নির্যাতন ও নির্বিচারে হত্যার প্রতিবাদ করেন। সরকারকে ছাত্রদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ারও আহ্বান জানান প্রবাসীরা। সরকার দাবি মেনে না নেওয়ায় একপর্যায়ে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স শাটডাউনের ঘোষণা দেন।
ছাত্রদের সমর্থন জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা প্রবাসীদের টার্গেট করে প্রবাসে থাকা আরেকটি চক্র। তারা সেই সময় কুয়েতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে আন্দোলনে সংহতি জানানো প্রবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্মারকলিপি দেন। এমনকি শাটডাউন কর্মসূচিতে যারা রেমিট্যান্স বন্ধ রেখেছিলেন তাদের নিয়েও গুজব ছড়ায় চক্রটি। পাশাপাশি তাদের মোবাইলে ও অনলাইনে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেয় তারা। তাই শেখ হাসিনা সরকারের পতন না হলে বিপদে পড়তেন বলে মনে করছেন ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে সরকারের সমালোচনা করা কুয়েত প্রবাসীরা।
আরও পড়ুন
কুয়েত প্রবাসী রানা মজলিস বলেন, আমি দীর্ঘ আট বছর কুয়েতে কাজ করছি, আমি একজন তরুণ প্রবাসী হিসেবে সবসময় সব সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করি। এই আন্দোলনের শুরু থেকে আমি ছাত্রদের পক্ষে কথা বলি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যৌক্তিক বিষয়গুলো তুলে ধরি। ছাত্রদের গণহত্যার প্রতিবাদ করি তখন অনেকে আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়। তবুও আমি ছাত্রদের পক্ষে লিখেছি। একজন তরুণ প্রবাসী হিসেবে চাওয়া একটি স্বাধীন বাংলাদেশ, যেখানে আইনের শাসন থাকবে, মানুষের জীবনের নিশ্চয়তা থাকবে, কোনো প্রবাসী হয়রানির শিকার হবে না।
কুয়েত প্রবাসী আমির হোসেন বলেন, আমি কুয়েতের প্রবাসীদের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকায় অনেকের সঙ্গে পরিচয় আছে। তারা আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে শুরু থেকে আমাদের এই প্ল্যাটফর্মে লেখালেখির মাধ্যমে সরব ছিলেন। একপর্যায়ে যখন বাংলাদেশে ছাত্রদের নির্বিচারে হত্যা ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন আমরা রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধের ডাক দিই। এতে সবাই সাড়া দেন। তখন একটা কুচক্রী মহল আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়া শুরু করে। দলমত পছন্দ ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু সেজন্য কাউকে হুমকি দেওয়ার অধিকার তাদের কে দিলো? যদি সরকার পরিবর্তন না হতো তাহলে তো আমাদের বিপদে পড়তে হতো।
আরেক প্রবাসী নুরুল আমিন বলেন, আমি একটি প্রবাসী সংগঠনের সভাপতি। আমাদের সংগঠন বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশের বাংলাদেশি প্রবাসীদের নিয়ে গঠিত। আমরা সবসময় প্রবাসীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করি এবং বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে দুর্যোগে মানুষের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিই সাধ্যমতো। এই আন্দোলনে আমরা রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করতে একমত পোষণ করি এবং সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর প্রচারণা করি।
তিনি বলেন, এসময় আমাকে অনেকে হুমকি দেওয়া শুরু করে। এর মধ্যে একজন আমাকে কুয়েত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মচারী পরিচয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন। প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে নতুন সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে মধ্যপ্রাচ্যের সবগুলো দূতাবাসে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যেন প্রবাসীদের সঙ্গে আচরণগত পরিবর্তন আনে। আমরা চাই প্রবাসে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধ হোক এবং সাধারণ প্রবাসীরা হয়রানির শিকার না হোক।
রেমিট্যান্স যোদ্ধারা বলেন, প্রবাসীরা বিদেশের মাটিতে পরিশ্রম করে বৈধ উপায়ে সৎভাবে উপার্জন করে বৈধ উপায়ে দেশে টাকা পাঠিয়ে পরিবার ও দেশের অর্থনীতি সচল রাখেন। আর দেশের এক শ্রেণির কিছু সংখ্যক মানুষ দুর্নীতি করে অবৈধ উপায়ে সেই টাকা বিদেশে পাচার করে বিদেশে সম্পদের মালিক হয়েছেন। তারা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছেন। নতুন সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে তাদের আইনের আওতায় এনে এসব সম্পদ দেশে ফিরিয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে।
এসএসএইচ