বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশার বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে মালয়েশিয়া
অভাবের সংসারে হাল ধরতে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানো শত শত বাংলাদেশি শ্রমিকের দুর্দশার চিত্র ফুটে ওঠে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে (ওএইচসিএইচআর) পাঠানো এক চিঠিতে। এ নিয়ে দেশবিদেশের গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে মালয়েশিয়া সরকার। দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় এবার দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করার কথা জানিয়েছে।
রোববার (৫ নভেম্বর) মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী ভি শিবকুমার বলেছেন, একটি বিষয় নিশ্চিত করতে চাই, বিদেশি কর্মীরা যেন ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়। তারা যেন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে না থাকে, ঋণের জালে আটকে না পড়ে সে বিষয়ে বিশেষ নজর রেখে দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে জোরপূর্বক শ্রমের ঘটনা এড়াতে চাই। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। এছাড়া আইনের পরিপন্থি যা ঘটে তা এড়াতে চাই।
আরও পড়ুন
সম্প্রতি অভিবাসী অধিকারকর্মী অ্যান্ডি হল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) অধীন ওএইচসিএইচআরকে লেখা এক চিঠিতে শ্রমিকদের অবস্থাকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি তাদের দরিদ্র জীবনযাত্রার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে সংকুচিত নোংরা বাসস্থান, অস্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন, সামান্য খাবার খেয়ে জীবন ধারণের চিত্র। কীভাবে তারা গত ১৮ মাস বা তারও বেশি সময় ধরে নিয়োগের অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে ঋণগ্রস্ত হয়ে আছেন, তাও উঠে এসেছে।
অ্যান্ডি হল দাসত্ব, পাচার, অভিবাসী, দারিদ্র্য এবং ব্যবসা ও মানবাধিকার বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং এশিয়া প্যাসিফিকের অভিবাসন ও মানবাধিকার বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা পিয়া ওবেরয়ের কাছেও নথিভুক্ত অভিযোগগুলো দাখিল করেছেন। সেখানে তিনি জানান, মালয়েশিয়া সরকারের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে প্রায় আড়াই লাখ বাংলাদেশি কর্মী তাদের দেশে রয়েছে।
এই অভিবাসী অধিকার কর্মী বলেন, মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কেস স্টাডি এবং চিঠিপত্রের ভিত্তিতে আমি জরুরিভাবে ইউএনএইচআরসিকে মালয়েশিয়ার পরিস্থিতি সমাধানের জন্য ওএইচসিএইচআরের বিশেষ পদ্ধতির আহ্বান জানাতে চাই।
তিনি বলেন, সরকার স্বীকার করেছে মালয়েশিয়ায় প্রায় আড়াই লাখ কর্মী রয়েছে। যার মধ্যে নিয়মতান্ত্রিক বাধ্যতামূলক শ্রম, আধুনিক দাসত্ব এবং ঋণের বন্ধন রয়েছে।
আরও পড়ুন
তার মতে, এই ধরনের পরিস্থিতি কীভাবে ঘটতে পারে তা সরকারের খতিয়ে দেখা উচিত ছিল। তাছাড়া অভিবাসী শ্রমিকদের ব্যাপারে তারা যদি আন্তরিক হন তবে অতিরিক্ত শ্রমিক থাকা উচিত নয়।
সম্প্রতি দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন বলেছেন, অভিবাসী কর্মী নিয়োগের বিধিবিধান শিথিল করায় বিভিন্ন খাতে আড়াই লাখের বেশি বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে।
একটি নথিভুক্ত মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে অ্যান্ডি হল বলেছেন, ৪০০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক দেশটিতে শ্রমে জড়িত ছিল, যাদের বর্তমানে থাকার ও খাবারের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই।
তিনি বলেন, তারা সংকুচিত অবস্থায় বাস করছেন এবং স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। একটি ঘরে প্রায় ১৪ জন শ্রমিক আটকে আছে। আমি এই গ্রুপ থেকে ভিডিও পেয়েছি। যে এজেন্ট তাদের এখানে নিয়ে এসেছে তারা প্রত্যেককে ২০০ টাকা করে দিয়েছে, যা তারা খাবার কেনার জন্য খরচ করছে। এটি দিয়ে তাদের বেশি দিন চলবে না।
এই অভিবাসী অধিকারকর্মী বলেন, শ্রমিকদের স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে তাদের সম্পূর্ণ মজুরি পাওয়া উচিত এবং তাদের অন্য সহায়তা প্রদান করা উচিত।
তিনি বলেন, শ্রমিকরা ভয়ের মধ্যে বাস করছেন। কারণ, তাদের প্রয়োজনীয় নথির অভাব রয়েছে। তাদের বাইরে যাওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থায় শ্রমিকদের ছেড়ে দেওয়া দালাল, নিয়োগকর্তা এবং মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে অগ্রহণযোগ্য।
এসএসএইচ