অপহরণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা
দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি প্রবাসী ব্যবসায়ীদের অপহরণের ঘটনা বহু গুণ বেড়েছে। আবার অপহরণের পর মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা এখন সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে। দেশটির প্রধান শহর জোহানসবার্গ, কেপটাউন, ডারবান, ব্লুমফ্রন্টেন্ট ছাড়াও ৯টি প্রদেশেই বাংলাদেশি ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা অপহরণ শিকার হচ্ছেন।
সম্প্রতি জোহানসবার্গে নিজ দোকানের সামনে ৪ দেহরক্ষীর মধ্য থেকেই বাংলাদেশি ব্যবসায়ী সালাউদ্দীনকে উঠিয়ে নিয়ে যায় অপহরণকারীদের একটি দল। অপহরণের প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও তার কোনো হদিস মেলেনি। তা ফিরে না আসা বা অপহরণকারীরা মুক্তিপণ চেয়ে যোগাযোগ না করায় বিষয়টিকে অন্যান্য অপহরণের সঙ্গে মেলাতে পারছেন না প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
গত ১৯ আগস্ট দেশটির ইস্টার্ন কেপ প্রদেশের কুইন্স টাউনের একটি সড়ক থেকে রিংকু, সুজন, মানিক ও ইসমাইল নামের চার বাংলাদেশি অপহৃত হওয়ার তিন দিন পর ২ লাখ ৮০ হাজার রেন্ড (স্থানীয় মুদ্রা) মুক্তিপণ দিয়ে তারা ফিরে আসেন।
ফিরে আসাদের কেউ কেউ মাফিয়াদের আগের দেওয়া হুমকির বাস্তবরূপ দেখলেও বর্তমানে টার্গেটের বাইরেও রাস্তা থেকে আচমকা তুলে নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা বেড়েছে। অপহৃত হওয়ার পর আইনি পথে না গিয়ে নিরীহ প্রবাসীরা চক্রের দাবি মেনে সামর্থ্য অনুযায়ী দক্ষিণ আফ্রিকা বা বাংলাদেশিদের কাছে দাবিকৃত টাকা মিটিয়ে প্রাণে বেঁচে আসার চেষ্টায় থাকেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় অপহৃত প্রবাসী ব্যবসায়ীদের উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করেন প্রবাসী বাংলাদেশি শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, সপ্তাহে দুই থেকে চারটা অপহরণের ঘটনা আমরা শুনে থাকি। বাস্তবে দেশটিতে এর চেয়ে বেশি প্রবাসী ব্যবসায়ীরা অপহরণের শিকার হচ্ছেন। বেশিরভাগ ফিরে আসার পর আর মুখ খুলেন না। শুধু ধনীরা অপহরণ হচ্ছেন এমন নয়, মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরাও অপহৃত হচ্ছেন।
শফিকুর বলেন, এটা শুধু বড় বড় গ্যাংস্টার বা মাফিয়ারা করছে বিষয়টি এমন নয়। ক্ষেত্র বিশেষে পাকিস্তানি, ভারতীয়, আফ্রিকান, এমনকি কিছু এলাকায় বাংলাদেশিরা অপরাধ চক্র গড়ে তুলেছেন। শুধুমাত্র অপরাধমূলক চিন্তা থেকে তারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবাসীদের কমিউনিটি সংগঠন বাংলাদেশ পরিষদের সহসভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা সালাউদ্দীনের অপহরণের ঘটনাসহ বিষয়গুলো নিয়ে দেশটির পুলিশসহ বিশেষ বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিছু ঘটনায় সফল হয়েছি। এই সমস্যা শুধু আমাদের নয়, এটা এখানকার বড় সমস্যা। যার কিছুটা খারাপের শিকার আমরাও হয়ে যাচ্ছি। তারপরও কমিউনিটি ঐক্যবদ্ধ থাকলে, একে অপরকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে চললে আশা করছি ভালো ও নিরাপদ থাকতে পারব।
দক্ষিণ আফ্রিকা শাখা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. লুৎফর রহমান রূপন বলেন, সম্প্রতি দূতাবাসের সহযোগিতায় আইনি লড়াইয়ে দেশটিতে প্রবাসী ব্যবসায়ী শহিদুর রহমানকে (৪৭) অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় দুই আফ্রিকানকে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমার ধারণা সঠিক পথে আইনি প্রক্রিয়ায় গেলে দেশটিতে বাংলাদেশিরা ভবিষ্যতে নিরাপদে থাকতে পারবেন।
ওএফ