রওশন ‘মৃত্যুশয্যায়’, সমুদ্রবিলাসে জি এম কাদের
থাইল্যান্ডের ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। অথচ এ সময়ে সস্ত্রীক নেতাকর্মীদের নিয়ে সমুদ্রবিলাস করছেন দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের)। তাদের সুমদ্রবিলাসের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
রোববার (৭ নভেম্বর) বিকেলে জাপার চেয়ারম্যানের সমুদ্রবিলাসের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন দলটির অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল করিম ভূইয়া। এরপর থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়। তারা বলছেন, রওশন এরশাদ জাপার শুধু একজন নেতাই নন, তিনি জি এম কাদেরের সম্পর্কে ভাবিও হন। যেখানে পরিবারের একজন সদস্য জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, সেখানে এ সময় কীভাবে তিনি সমুদ্রবিলাসে যান?
যদিও জি এম কাদেরের সঙ্গীদের দাবি, এটি কোনো সমুদ্রবিলাস নয়। দলের চেয়ারম্যান কক্সবাজারে গেছেন সাংগঠনিক সফরে। এর মধ্যে কিছু সময়ের জন্য স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাকে সমুদ্র দেখাতে নিয়ে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেজাউল করিম ভূইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) ঢাকা থেকে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্ব একটি টিম কক্সবাজার জেলায় সাংগঠনিক সফরে আসেন। মূলত আগামী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ সফর। ইতোমধ্যে আমার কয়েকটি বৈঠকও করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কক্সবাজারের স্থানীয় নেতাকর্মীরা শনিবার বিকেলে স্যারকে সমুদ্র দেখাতে নিয়ে যান। এর বাইরে আর কিছু নয়।’
তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘দেশে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ধর্মঘট দেওয়া হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। এ সময় সত্যিকারের বিরোধী দল হিসেবে আমাদের উচিত ছিল মানুষের পাশে থাকা। কিন্তু সেটা না করে জাপা চেয়ারম্যান সদলবলে গেছেন সমুদ্রবিলাসে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নেতাকর্মীদের মধ্যেও সমালোচনা হবে— এটাই স্বাভাবিক।’
তিনি আরও বলেন, ‘রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের মধ্যকার বিরোধ প্রায় সবার জানা। তাই বলে যখন রওশন এরশাদ মৃত্যুশয্যায় তখন তার এমন সমুদ্রবিলাস ও আনন্দ উৎযাপন খুবই দৃষ্টিকটু।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার এক কেন্দ্রীয় নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কয়েকদিন আগে জি এম কাদের নিজেও তার বক্তব্যে বলেছেন যে রওশন এরশাদ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এ অবস্থায় তার আনন্দ-উৎযাপন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেসব ছবির পোস্ট দেখে জাপার একজন কর্মী হিসেবে আমি ব্যথিত।’
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (৫ নভেম্বর) বিকেল ৫টায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে নেওয়া হয় রওশন এরশাদকে।
জাপা সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ আগস্ট রওশন এরশাদের ফুসফুসে জটিলতা দেখা দেয়। অক্সিজেন লেভেল কমতে শুরু করলে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বেশকিছু দিন তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে কেবিনে নেওয়া হয়। হাসপাতালে থাকাকালে গত ২০ অক্টোবর আবারও তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। দ্বিতীয় দফায় আইসিইউতে নেওয়া হয়।
এর আগে ২৩ মে টানা ২৪ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন রওশন এরশাদ। ফুসফুসের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছেন এ রাজনীতিবিদ।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ ময়মনসিংহ- ৪ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি সংসদে গত দুই মেয়াদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এরশাদের মৃত্যুর পর ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ রংপুর- ৩ আসন থেকে উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এএইচআর/ওএফ