ক্ষমতাসীনদের মদদেই হামলা : মির্জা ফখরুল
দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপে হামলার ক্ষমতাসীনদের মদদেই হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসন কার্যালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি করেন তিনি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এখানে আজ অনেকে উপস্থিত আছেন, যারা ঘটনা সচক্ষে দেখেছেন। নোয়াখালীর চৌহমুনীতে কামাক্ষা বাবু (উপস্থিত) তিনি ঘটনা নিজের চোখে দেখেছেন। সেখানে যারা আক্রমণ চালিয়েছিল, তারা বিরোধীদলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী নয়। এটি আজ প্রমাণিত।
তিনি বলেন, আমরা বার বার বলছি, দাঙ্গা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা ক্ষমতাসীনদের মদদ ছাড়া সম্ভব নয়। এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে, আজ আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে, সেটাকে আরও দীর্ঘায়িত করার জন্য অর্থাৎ আগামী নির্বাচনে যাতে তারা পার পেয়ে যেতে পারে, সেজন্য নানা অপকৌশল গ্রহণ করছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি সব সময় সব ধর্মের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আপনারা জানেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রমনার রেসকোর্সের কালি মন্দির ভেঙে দিয়েছিল। ৭১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেটিকে বুলডোজার দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। আর বিএনপি সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার নির্দেশে রমনা কালিমন্দির পুনঃনির্মাণ করা শুরু হয়। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বেহাত হওয়া জায়গা খালেদা জিয়ার নির্দেশে সাদেক হোসেন খোকা ফেরত আনেন।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে নোয়াখালীর চৌহমুনীতে ৯০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা নির্বাচন করতে পারে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক জায়গায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এর উদ্দেশ্যটা কী? গত নির্বাচনের সময়ে তারা গায়েবি মামলা দিয়েছে, তার আগে নাশকতার মামলা দিয়েছে, তারও আগে বিস্ফোরক মামলা দিয়েছে। আমাদের ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এখানে আমরা যারা বসে আছি, এমন কেউ নেই যে যার বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১০০টি মামলা নেই।
হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনাদের শুধু এটুকু বলতে চাই যে, আওয়ামী লীগ প্রতারণার রাজনীতি করে। তারা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার রাজনীতি করে। ১৯৭২ সালে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, গণতন্ত্রের কথা বলে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে। আজ ভিন্ন আঙ্গিকে আবার একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্রের মোড়ক পরে নির্বাচন নির্বাচন খেলা করছে। তারা আবার ওই একদলীয় শাসনের দিকে যাচ্ছে এবং এখানে ঘৃণার রাজনীতি ছড়িয়ে দিচ্ছে।
শারদীয়া দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানাতে বিএনপি উদ্যোগে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের নিচতলায় মতবিনিময় সভাটির আয়োজন করা হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এবং হিন্দু সম্প্রদায়কে শারদীয়া শুভেচ্ছা জানান।
সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, জয়দেবপুর, লক্ষ্মীপুর, নওগাঁ, কিশোরগঞ্জ, নড়াইল, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও জামালপুর প্রভৃতি জেলা থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট ও ছাত্র যুব ফ্রন্টের দেড় শতাধিক সদস্য এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
বিএনপি নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও অমলেন্দু দাস অপুর সঞ্চালনায় মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, অপর্ণা রায় দাস, জন গোমেজ, অশোক কুণ্ডু, সুশীল বড়ুয়া, রমেশ দত্ত, কামাক্ষা চন্দ্র দাস, সঞ্চয় দে রিপন, সৌরভ পাল, জয়দেব জয়, বিশ্বজিত ভদ্র, বিশ্বজিত ভদ্র, সীমান্ত দাস, সঞ্চয় গুপ্ত, পলাশ মণ্ডল প্রমুখ।
এএইচআর/আরএইচ