সরকার জবরদখল করে বসে আছে : মির্জা ফখরুল
বর্তমানে জাতি একটি ভয়াবহ দুঃসময় অতিক্রম করছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ একটি সরকার জবরদখল করে বসে আছে। যারা আমাদের ৫০ বছরের সব অর্জনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এ দুঃসময় শুধু সংবাদ মাধ্যমের নয়, এ দুঃসময় শুধু বিএনপির নয়, এ দুঃসময় পুরো জাতির জন্য।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সাধারণ সভায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ এখন রাজনীতিবিদরা পরিচালনা করছে না। একজন রাজনীতিবিদকে (শেখ হাসিনা) সিকিউরিটি হিসেবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। তাকে দিয়ে গণতন্ত্রবিরোধী সব কাজগুলো করিয়ে নিচ্ছে। তারা রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আজ সংসদে জনগণের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ জনকে নির্বাচিত করেছে। ২০১৮ সালে তারা আগের রাতেই ভোট ডাকাতি করেছে। আপনারা জানেন এ আওয়ামী লীগই ৭২-৭৫-এ চারটি সংবাদ মাধ্যম ছাড়া সব সংবাদমাধ্যম নিষিদ্ধ করেছিল। সংবাদ মাধ্যমকে পুরোপুরি দলীয়করণ করা হয়েছিল। আমি ধন্যবাদ জানাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে, যিনি স্বৈরাচার এরশাদের হাত থেকে একটি গণতন্ত্র ব্যবস্থা ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন, আমাদের বাক ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন।
ফখরুল বলেন, একটি মুক্ত সমাজ, দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম। আওয়ামী লীগ আমাদের সেই আশা আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা আগেও বাকশাল গঠন করেছিল এবং এখনও গণতন্ত্রের মুখোশ পড়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে আমাদের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা জানেন ২০১২ সালে বিচারপতি খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিলেন। আওয়ামী লীগ সেটাকে লুফে নিয়ে বাস্তবায়ন করেছে, যার ফলে আজ নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ একটি আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আজ আবার শোনা যাচ্ছে নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। কেউ বলছে, এটার জন্য একটি আইন করা দরকার। কিন্তু আইনটি করবে কে? সংসদে তো আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যকিছু নেই। যারা এ দেশে গণতন্ত্রকে হরণ করে মানুষের অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে, তারাই আজ এ আইনটি করবে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের সঙ্গে মুক্ত গণতন্ত্র ও মুক্ত গণমাধ্যম কখনও একসঙ্গে যায় না। ফ্যাসিবাদ মানেই হলো ভয়ভীতি, ত্রাস সৃষ্টি করে মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া। গুম, খুন ও নির্যাতনের মাধ্যমে অস্ত্রের মুখে টিকে থাকা। যে কৌশল আজ আওয়ামী লীগ বেছে নিয়েছে।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, ১৯৯০ সালে আমরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছিলাম। এ সরকার সেই গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। আমরা অবিলম্বে ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চাই।
মাওলানা হালিম বলেন, সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী ও সংগ্রাম সম্পাদক জেলে। সাংবাদিকদের ভয় দেখাতে এখন আবার ১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। কিন্তু এ দুঃসময়ে সাংবাদিকরা যে অবদান রাখছে তা জাতি মনে রাখবে। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সব ন্যায়সঙ্গত দাবির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী অতীতে ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।
ডিইউজে সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, বিএফইউজের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজের সাবেক সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডিইউজের সাবেক সভাপতি বাকের হোসেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
এমএইচএন/এসএসএইচ