বিএনপির নতুন ২ কমিটির মেয়াদ কতদিন?
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালামকে আহ্বায়ক ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিকুল আলম মজনুকে সদস্য সচিব করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হককে সদস্য সচিব করে ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক কমিটিও দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২ আগস্ট) বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই দুই কমিটি ঘোষণা করেন। কিন্তু সেই বিজ্ঞপ্তিতে কমিটির মেয়াদ কতদিন হবে, ভবিষ্যতে কমিটির আকার কত বড় হবে এবং তারা কতদিন পর সম্মেলন করবে- এসব বিষয়ে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। ফলে, দলটির নেতাদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কেন এসব বিষয় অস্পষ্ট রেখে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির নেতারা বলছেন, সাধারণত অতীতে আমরা দেখেছি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হলে তাদের কার্যকাল কতদিন তা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট উল্লেখ থাকে। একই সঙ্গে আহ্বায়ক কমিটিকে একটি নিদিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয় সম্মেলনের আয়োজন করতে। শুধু তাই নয়, অনেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এটাও উল্লেখ থাকে যে, আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ দুজন পরবর্তী সম্মেলনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য প্রতিযোগিতা করতে পারবেন, নাকি পারবেন না। কিন্তু ঘোষিত কমিটির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব বিষয়ে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। ফলে, কেন বা কার স্বার্থে বা কী কারণে এমন করা হয়েছে তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নতুন আহ্বায়ক আবদুস সালাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি কমিটির কথা শুনেছি। কিন্তু সেখানে কী লেখা আছে, সেটি দেখিনি। তবে, আমি সম্মেলনের পক্ষে। আশা করি খুব দ্রুততম সময়ে সবকিছু গুছিয়ে এনে আমরা একটি সম্মেলন দিতে পারব।
আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ চার নেতা পরবর্তী সম্মেলনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিযোগিতা করতে পারবেন কি না, জানতে চাইলে সালাম বলেন, আসলে বিষয়টি তো আমাদের ওপর নির্ভর করছে না। দল থেকে যদি সিদ্ধান্ত থাকে যে, আহ্বায়ক কমিটির নেতারা অংশ নিতে পারবেন না, তাহলে নেবেন না। আর যদি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে তাহলে যার ইচ্ছা সেই অংশ নেবেন। এটি তো জটিল কোনো বিষয় নয়।
আরও পড়ুন : ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপির কমিটি ঘোষণা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘সাধারণ আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের তিন মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয় সম্মেলনের আয়োজন করতে। কিন্তু দেখা যায়, ছয় মাস বা এক বছরেও অনেকে সম্মেলন দিতে পারে না। ঘোষিত কমিটির ক্ষেত্রে সময়ের কোনো বলাই নেই। এখন আল্লাহ-ই জানেন ওই দুই আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে কতদিন চলবে ঢাকা মহানগর বিএনপির রাজনীতি।’
তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে সম্মেলন করতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু তারা এক বছরের বেশি সময় পরে সম্মেলন করে। সেই সম্মেলনের সময় ছয় মাস পার হলেও এখনও কমিটি হয়নি। এভাবেই চলবে বিএনপির সবকিছু!
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন অস্পষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ঢাকা পোস্টকে বলেন, কমিটির মেয়াদ কতদিন হবে, তাদের কর্মপরিধি কেমন হবে এবং আহ্বায়ক কমিটির নেতারা আগামী সম্মেলনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে অংশ নিতে পারবেন কি না, তা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে স্পষ্ট করা হবে। আমরা তাদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেব।
এদিকে, অভিযোগ উঠেছে বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিলে নেওয়া ‘এক নেতার এক পদ’ নীতির বিষয়টি মানা হয়নি ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের জন্য ঘোঘিত আহ্বায়ক কমিটির ক্ষেত্রে। ওই দুই আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ চার নেতার মধ্যে দুই আহ্বায়ক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। দুই সদস্য সচিবের মধ্যে দক্ষিণের রফিকুল আলম বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য। আর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক।
ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিতে নারীদেরও উপেক্ষা করা হয়েছে। দলটির বেশ কয়েকজন নেত্রী ঢাকা পোস্টের কাছে এমন অভিযোগও করেন। তারা বলছেন, ৪৯ সদস্য বিশিষ্ট ওই দুই কমিটিতে মাত্র তিন নারী স্থান পেয়েছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে সাবেক ছাত্রদলের নেত্রী আরিফা সুলতানা রুমা ও নাছরিন রশিদ পুতুলকে (মহিলা কমিশনার)। উত্তরের কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে সাবেক কাউন্সিলর ফেরদৌস আহমেদ মিষ্টিকে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এম এ কাইয়ুম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম নকির কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় তা ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়।
এএইচআর/এসএম