হেফাজতের কমিটিতে রাজনৈতিক নেতা, আত্মীয়
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কমিটিতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত কাউকে পদ দেওয়া হবে না বলে সম্প্রতি জানিয়েছিলেন সংগঠনটির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা। তবে নতুন কমিটিতে তারা রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতাকে পদ দিয়েছেন।
কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেকে পরস্পর আত্মীয় বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাও কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আহমদ শফীর পুত্র ও হেফাজতের সাবেক প্রচার সম্পাদক মাওলানা আনাস মাদানী।
সোমবার (৭ জুন) মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির ও মাওলানা নুরুল ইসলামকে মহাসচিব করে ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এ কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এতে রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক), সিলেটের আজাদ দ্বীনী এদারা, তানজীমুল মাদারিসসহ কওমি ধারার সর্বোচ্চ শিক্ষা কর্তৃপক্ষ হাইয়াতুল উলইয়া সংগঠনের নেতাদের পদ দেওয়া হয়েছে।
নতুন কমিটিতে হেফাজতের নায়েবে আমির হয়েছেন আতাউল্লাহ হাফেজ্জি। তিনি রাজনৈতিক দল খেলাফত আন্দোলনের আমির। যুগ্ম মহাসচিব হয়েছেন মাওলানা আনোয়ারুল করিম। তিনি আরেক রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি।
এছাড়া দাওয়া বিষয়ক সম্পাদক হওয়া মাওলানা আবদুল কাইয়ুম সোবহানী রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নেতা। সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস খেলাফত আন্দোলনের নেতা। প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী জামাতভিত্তিক ওলামা মাশায়েখ ও মসজিদ মিশন কেন্দ্রিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত।
রাজনৈতিক দলের নেতার পাশাপাশি হেফাজতের নতুন কমিটিতে আছে আত্মীয়-পরিজনের সংশ্লেষ। সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দুই পদে আছেন মামা-ভাগ্নে। জানা গেছে হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটির আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী মামা আর প্রধান উপদেষ্টা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী তার ভাগ্নে।
কওমি মাদরাসার আলেমরা বলছেন, নতুন কমিটি গঠনের নামে মূলত হাস্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। আলেমদের অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি কওমি শিক্ষা পরিচালনায় যেসব গুরুত্বপূর্ণ বোর্ড আছে, ঘোষিত কমিটিতে এখন সেসব বোর্ডের কর্তাদের সামনে আনা হয়েছে। এতে সারা দেশের কওমি শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
জানা গেছে, হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী বেফাকে আমেলার সদস্য। হেফাজতের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী বেফাকের নায়েবে আমির এবং হাইয়াতুল উলয়ার স্থায়ী কমিটি সদস্য। হেফাজতের নায়েবে আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জি বেফাকের নায়েবে আমির। এছাড়া হেফাজতের নায়েবে আমির সালাউদ্দিন নানুপুরী বেফাকে আমেলার সদস্য।
হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব সাজেদুর রহমান বেফাকের নায়েবে আমির এবং হাইয়াতুল উলয়ার স্থায়ী কমিটির সদস্য। হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ গাছবাড়ি সিলেটের আজাদ দ্বীনি বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। মাওলানা আব্দুল হক বেফাকের নায়েবে আমির ও হাইয়াতুল উলয়ার স্থায়ী কমিটি সদস্য। মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস হেফাজতের নায়েবে আমির ও হাইয়াতুল উলয়ার স্থায়ী কমিটির সদস্য।
এ প্রসঙ্গে হেফাজতের নতুন মহাসচিব মাওলানা হাফেজ নুরুল ইসলাম জিহাদী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সবার সঙ্গে আলাপ করেই কমিটি করা হয়েছে। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তরা কমিটিতে আছেন, তবে অল্প কয়েকজন, তারা মূল দায়িত্বে নেই। আগের কমিটিতে ছিলেন ১৫১ জন, সেখান থেকে বাছাই করে ৩৩ জন করা হয়েছে।
জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী ঢাকা পোস্টকে বলেন দু-একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। তারা বয়স্ক মানুষ ও সম্মানিত আলেম। তাদেরকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। আর হেফাজতের যে ১১ দফা, সেখানে কিন্তু রাজনৈতিক কোনো দাবি নেই। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তি থাকলেও আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কিন্তু অরাজনৈতিক। সুতরাং এটা কোনো বিষয় না।
এ প্রসঙ্গে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আহমদ শফীর পুত্র ও হেফাজতের সাবেক প্রচার সম্পাদক মাওলানা আনাস মাদানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রত্যেক সংগঠনের একটা নিয়ম-নীতি ও গঠনতন্ত্র থাকে। হেফাজতের এই কমিটি গঠনে তার কিছুই মানা হয়নি। আর এ কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছে তারা বিভিন্ন মামলার আসামি। ২০১০ সালে যে উদ্দেশ্য নিয়ে আল্লামা আহমদ শফী হেফাজত গঠন করেছিলেন, তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
হেফাজতে কমিটিতে তার ভাই মাওলানা ইউসুফ মাদানী সহকারী মহাসচিব পদে থাকার প্রসঙ্গে আনাস মাদানী বলেন, কমিটিতে আমার ভাইকে পদ দেওয়ার বিষয়ে তার সম্মতি নেওয়া হয়নি। আমরা এ কমিটি প্রত্যাখান করি।
এএইচআর/এসকেডি/জেএস