সংস্কার প্রস্তাবের ব্যাপারে জাতীয় স্বার্থে নমনীয় থাকবে এবি পার্ট

দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, এনসিসিতে প্রধান বিচারপতির অন্তর্ভুক্তিসহ বেশ কিছু বিষয়ে এবি পার্টির মতামত পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন। সংস্কার প্রস্তাবের ব্যাপারে জাতীয় স্বার্থে নমনীয় অবস্থানে থাকার কথাও জানিয়েছে এবি পার্টি।
সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর দলের পক্ষ থেকে একথা জানানো হয়।
সংবিধানের মূলনীতি, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, নির্বাচনে প্রার্থীদের বয়সসীমা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য এবং মেয়াদ, সংবিধান সংশোধনের নিয়ম, একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান পদে বহাল থাকাসহ দলের পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে যে ৩২টি প্রস্তাবে দ্বিমত ও ২৬টি বিষয়ে আংশিক একমত পোষণ করা হয়েছিল তার ব্যাখ্যাসহ দলের মতামত বৈঠকে তুলে ধরা হয়।
এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আইন, সংসদ-বিচার বিষয়ক কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠক ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক দলের পক্ষ থেকে নীতিগত অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রিয়াজ ছাড়াও ঐকমত্য কমিশনের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে সভায় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফররাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সাংবাদিক মনির হায়দার সভা সঞ্চালনা করেন।
এবি পার্টির প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মেজর আব্দুল ওহাব মিনার, ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল দিদারুল আলম (অব.), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ্ আল মামুন (রানা), ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, দলের শ্যাডো বিষয়ক কমিটির প্রধান ব্যারিস্টার আব্বাস ইসলাম খান ও নারী বিষয়ক সম্পাদক ফারাহ নাজ সাত্তার প্রমুখ।
আলোচনার শুরুতে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, ২৯টি রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নিয়ে ৫টি সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাবনা তৈরি করেছিল তারই আলোকে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ইতোমধ্যে ৪টি দলের সঙ্গে কমিশনের সংলাপ হয়েছে। ঈদের পর এবি পার্টিকে দিয়ে প্রথম সংলাপ শুরু হলো।
তিনি এবি পার্টির নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আশা করা যায় সবার সহযোগিতায় আমরা আগামী জুলাইয়ের মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের কাজ শেষ করতে পারবো।
সংলাপে দুদক সংক্রান্ত আলোচনা সূত্রপাত করেন দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি ন্যায়পাল বিষয়ক প্রস্তাবনার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরলে এবি পার্টি তাতে সম্মতি জানায়। বিচার বিভাগ সংক্রান্ত প্রস্তাবের ব্যাপারে বিচারপতি এমদাদুল হক প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে এবি পার্টির যে মতামত ছিল তা বিশ্লেষণ করে কমিশনের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন।
পুলিশ সংস্কার কমিশন কেন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত না নিয়ে সরাসরি ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত নাগরিকের মতামত ও পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের মতামত নিয়েছে তা ব্যাখ্যা করেন সাবেক সচিব সফররাজ হোসেন।
ড. আলী রিয়াজ সংবিধান ও নির্বাচন সংস্কার বিষয়ক প্রস্তাবগুলো নিয়ে ধারাবাহিক বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। সার্বিক আলোচনার পর দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের ব্যাপারে এবি পার্টির যে ভিন্নমত ছিল তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
এছাড়াও সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, এনসিসি-তে প্রধান বিচারপতির অন্তর্ভুক্তিসহ বেশ কিছু বিষয়ে এবি পার্টি তার মতামত পুনর্বিবেচনায় একমত হওয়ার কথা জানান।
তবে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, প্রাদেশিক ব্যবস্থা না রাখা-সহ কয়েকটি বিষয়ে দলের দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরা হয়।
বৈঠক শেষে দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, জাতীয় ঐক্য ও একটি গ্রহণযোগ্য সংস্কার প্রস্তাবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বার্থে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) নমনীয় অবস্থানে থাকবে।
জেইউ/জেডএস