বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়নি, উত্থাপনের পর পর্যালোচনা
আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে জোট নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি ১৪ দলের নেতাদের। নিজ নিজ দলের পক্ষ থেকে বাজেট নিয়ে প্রস্তাবনা তৈরি করা হলেও তা উত্থাপনে কোনো সভা বা আলোচনা হয়নি জোটের।
আগামী ২ জুন (বুধবার) বসছে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন। ৩ জুন (বৃহস্পতিবার) জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তার বাজেট উত্থাপনের পরই প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে দলীয় পর্যবেক্ষণ জানাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো।
শরিকদের সঙ্গে প্রাক বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়নি জানিয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই হয়নি। যেটা জানি না সেটা নিয়ে কী বলব? যখন দেবে (বাজেট) তখন দেখে বলব।
জোটের শরিক দলের নেতারা জানান, বিভিন্ন দিবস উদযাপন উপলক্ষে ১৪ দলের আয়োজনে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এজেন্ডা না থাকা সত্ত্বেও শরিক দলের কোনো কোনো নেতা আসন্ন বাজেট নিয়ে প্রাক আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা অনুষ্ঠিত হয়নি।
বিগত বছরগুলোর মধ্যে দুবার প্রাক বাজেট আলোচনা হয়েছিল জানিয়ে বাংলাদেশ জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা ব্যবস্থাপনা ও জীবিকার মধ্যে মানুষকে ফেরত আনা; ছোট উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী যারা আছেন তাদেরকে গুরুত্ব দিলে জীবিকা ও করোনা- দুটোরই ব্যবস্থাপনা হয়।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, করোনা মোকাবিলার বিষয়টি মাঝখানে রেখে বাজেট পরিকল্পনা করতে হবে। করোনাকালে আর্থসামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় যে দুর্বলতাগুলো প্রকাশ পেয়েছে, একই অবস্থা সামাজিক সুরক্ষা, খাদ্য, শিক্ষা, ডিজিটালাইজেশন ও স্বাস্থ্য খাতে। এ পাঁচটি খাতে সর্বজনীন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ এবারই নেওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।
তিনি আরও বলেন, রফতানি খাতকে সুরক্ষার জন্য যা যা করা দরকার তা-ই করতে হবে। করের হার বাড়ানোর দরকার নেই, আওতা বাড়ানো দরকার। আমার হিসাবে এক কোটি টাকা আয়কর দিতে সক্ষম এমন এক লাখ লোক আছেন বাংলাদেশে। এই এক লাখ লোককে কেন রেহাই দেওয়া হচ্ছে? নয় লাখ হাট-বাজার আছে বাংলাদেশে। এখন গ্রামের হাট-বাজারে লক্ষ কোটি টাকার ট্রানজেকশন (লেনদেন) হয়। কিন্তু এখানে কোনো কর নেই। এই নয় লাখ হাট-বাজারকে করের আওতায় আনা হোক।
গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, করোনা মোকাবিলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) স্থাপন, অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ; ভ্যাকসিনের জন্য এবারের বাজেটে আমাদের যতটুকু সম্ভব সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। গত বছর পোশাক শিল্পের মালিকদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে অনেক। কিন্তু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে কোনো প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই পথে বসেছেন। তাদের বিষয়ে এবারের বাজেটে যেন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ঘোষণা দিয়ে কালো টাকা সাদা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এভাবে ঘোষণা দেওয়ার মানে হচ্ছে, তোমরা চুরি করতে থাক, আমরা সাদা করে দেব। এটা তো ঠিক নয়।’
বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান বলেন, ‘আমরা মনে করি এবার কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এই তিন খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখতে হবে। চার নম্বরে যোগাযোগ ব্যবস্থা, আমাদের যেটা আছে। করোনা সহসাই যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। এজন্য সরকারি যে ব্যয় হয়, তা করতে হবে।’
এইউএ/জেডএস/এমএআর/