রোজিনার মামলা প্রত্যাহার ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অপসারণ দাবি
প্রথম আলোর জ্যৈষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। একইসঙ্গে সংগঠনটি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অপসারণ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির তদন্ত এবং দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছে।
সোমবার (২৪ মে) সংগঠনটি আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে সংগঠনটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, সম্প্রতি অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তাকে যেভাবে হেনস্তা ও গ্রেফতার করা হয়েছে। তা দেখে দেশের সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিক মহল বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ না হয়ে পারে না। গতকাল তার জামিন হলেও মামলা রেখে তার ওপর জুলুম ও হয়রানির হুমকি রেখে দেওয়া হল। আমরা রোজিনা ইসলামের ওপর আরোপিত মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছি।
তি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির ওপর ইতোপূর্বে ছাপানো রিপোর্টের পর এই সাংবাদিক হয়তো আরও রিপোর্ট প্রকাশ করবেন এই আশঙ্কায় মন্ত্রণালয়ের অনেকে মিলে তাকে যেভাবে হেনস্তা করেছেন তা শুধু একটি দুর্নীতি-লুণ্ঠনে উন্মত্ত অশুভ চক্রের পক্ষেই করা সম্ভব। আমরা ঘৃণাভরে এই চক্রের তীব্র নিন্দা জানাই এবং সরকারের বিভিন্ন মহলে সক্রিয় লুটেরা-দুর্বৃত্তদের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানাই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিয়ে কথার শেষ নেই। সাহেদ-সাবরিনা কেলেঙ্কারির পর এখনও সেখানে পছন্দের সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য চলছে, অন্যদের চান্স নেই। ফলে মন্ত্রণালয় বরাদ্দ ব্যবহার করতে পারছে না। এমন দুর্বল দুর্বৃত্তবান্ধব মন্ত্রীর নেতৃত্বে জনবান্ধব সবল মন্ত্রণালয় গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আমরা তার অপসারণ চাই।
শরীফ নুরুল আম্বিয়া দাবি করে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি লুণ্ঠন অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করার জন্য আমরা একটা শক্তিশালী তদন্ত কমিশন চাই। বলতেই হয়, সরকারের দুর্নীতি বিরোধী কথাবার্তা ও দুদকের রুটিন কাজকর্মে জনগণের আস্থা নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের এই ঘটনায় আবার প্রমাণিত হলো সরকার জনস্বার্থ ও জবাবদিহিতায় কাম্য গুরুত্ব প্রদান করে না।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম খোকন, বাংলাদেশের জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের হাওলাদার, বাংলাদেশ জাসদ কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করিম সিকদার, মনজুর আহমেদ মনজু, স্থায়ী কমিটির সদস্য নাসিরুল হক নোয়াব, বাংলাদেশ জাসদ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি আলমগীর হোসেন, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আসাদুজ্জামান খান জাকির, বাংলাদেশের জাতীয় শ্রমিক জোটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহতাবউদ্দিন আহমেদ শহীদ, জাতীয় যুবজোটের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদুর রহমান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ১৭ মে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় তাকে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত ৯টার দিকে তাকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। ওই রাতেই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। পরদিন সকালে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে তোলা হয়। আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।
রোববার (২৩ মে) সকালে রোজিনাকে আদালতের পক্ষ থেকে জামিন দেওয়ার পর বিকেল ৪টা ১২ মিনিটে তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন। এরপর চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন আছেন।
এমএইচএন/এফআর