বাম, প্রগতিশীল ও উদারনৈতিক দলগুলোকে ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের আহ্বান
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাম, প্রগতিশীল ও উদারনৈতিক রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেন, ‘কেবল মেহনতি মানুষের রক্ত যাবে, অন্যরা ক্ষমতা ভোগ করবে, তা হবে না। এবার জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ফল জনগণ নিজের ঘরে তুলে নেবে।’
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ঢাকা সমাবেশে’ তিনি এসব কথা বলেন। ‘জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন; গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা; নিত্যপণ্যের দাম কমানো, জানমালের নিরাপত্তা, শোষণ-নিপীড়ন-বৈষম্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ গড়ে তোলা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থা’র লক্ষ্যে এ সমাবেশ করে সিপিবি।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘ক্ষমতায় যেতে হলে খালি ঘরে বসে লড়াই করে গেলে চলবে না। নিজেদের সরকার গঠন করতে হবে। এবার বামপন্থিরা সরকার কায়েমের সংগ্রামে অবতীর্ণ হবে। সব প্রগতিশীল, বাম, উদারনৈতিক ও সৎ-নিষ্ঠাবান লোক ও দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, ‘নৌকা, ধানের শীষ, লাঙ্গল, দাঁড়িপাল্লা’ এই চারটিকে বাদ দিয়ে নয়া যুক্তফ্রন্ট গড়ে তোলেন। যুক্তফ্রন্টের সরকার গড়ে তুলেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট শাসনকে বিদায় নিতে হয়েছে। এ জন্য আমি বীর ছাত্রদের অভিনন্দন জানাই।’
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম তার বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘অনেকেই আন্দোলনের সাফল্যের দাবিদার হয়েছেন। আমিই মাস্টারমাইন্ড, আমিই মিটিকুলাসলি নায়ক। শুধু জুলাই-আগস্টের ঘটনা দিয়ে জুলাই বিপ্লবের তাৎপর্য বোঝা যাবে না। গত ১৫ বছর ধরে শ্রমিক, জনতা, বাম রাজনৈতিক দল, বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের ফসল এই অভ্যুত্থান।’
‘কোনো মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারকে দেখতে পারত না’ বলেও মন্তব্য করেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি বিস্ফোরণোন্মুখ ছিল। সুতরাং শুধু জুলাই-আগস্টের শহীদদের নয়, ১৬ বছর ধরে যারা সংগ্রাম করেছে তাদের স্যালুট জানাই। তাদের অবদানকে স্বীকার করে এগোতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী বয়ান মিথ্যা ও কুৎসিত। তারা সেটিকে ব্যবহার করেছে লুটপাটের জন্য। আওয়ামী লীগের বয়ানের কবর চাই। কিন্তু সেই কারণে যদি কেউ মুক্তিযুদ্ধকে কবর দিতে চান, তাহলে মনে রাখবেন আমরা অস্ত্র জমা দিয়েছি, ট্রেনিং জমা দিইনি।’
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘‘জামায়াত মাঠে নেমেছে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের দলিল হয়েছিল…। সেখানে আত্মসমর্পণকারীরা লিখেছিল, ‘আমরা পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও অক্সিলারি ফোর্স... মানে রাজাকার, আলবদর, জামায়াতসহ রাজনৈতিক অক্সিলারি ফোর্স।’ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যদি এই দেশে অধিকার না থাকে, জামায়াতেরও থাকতে পারে না।’’
সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ পরিচালনা ও সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজ্জাদ জহির চন্দন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সিপিবি নেতা খেতমজুর আন্দোলনের সংগঠক প্রদীপ ভৌমিকের সন্তান সুজন ভৌমিক।
এএইচআর/এসএসএইচ