হাসিনাকে দিয়ে ভারত এ দেশে ‘প্রক্সি শাসন’ প্রতিষ্ঠা করেছিল
সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশে একটি প্রক্সি শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা।
তারা বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের এক বছরের মধ্যেই দেশের সার্বভৌমত্বকে ভারত হাইজ্যাক করেছিল। তারপর পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার মাধ্যমে তারা এ দেশে একটি প্রক্সি শাসন কায়েম করেছিল। তবে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা বাংলাদেশ শাসন নামক ভারতের সেই আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নকে দুঃস্বপ্ন পরিণত করেছে।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর আয়োজিত বিজয় র্যালি পরবর্তী সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ বলেন, শেখ হাসিনা নামে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হলেও তিনি ছিলেন মূলত ভারতের প্রক্সি প্রধানমন্ত্রী। তবে হাসিনা রূপী ভারতীয় শাসন বাংলাদেশের ছাত্র জনতা রক্ত দিয়ে প্রতিহত করেছে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ নতুন স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের জন্য এটা একটা বড় অর্জন, তরুণদের মাধ্যমে একটা বড় স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি। এই তরুণ সমাজ এখনো ঘরে ফিরে যায়নি। যে কোনো পরাশক্তির হুমকি-ধামকি আমাদের তরুণ প্রজন্ম পরোয়া করে না।
তিনি বলেন, সর্বপ্রথম ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজির এনে দেওয়া স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল ব্রিটিশ শাসনামলের মধ্য দিয়ে। এরপর আমরা দীর্ঘ ১৯০ বছরের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে শত সহস্র জীবনের বিনিময়ে ১৯৪৭ সালে আরেক স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। কিন্তু এরপর দেখেছি আবারো এ দেশের ছাত্র-জনতা জুলুমের শিকার হয়েছে। এরপর ১৯৭১ সালে রক্ত দিয়ে আমাদেরকে আবারও স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়েছে। তখন আমরা ভেবেছিলাম একটি নতুন দেশ পেয়েছি এবার আমরা সামনের দিকে আগাবো। কিন্তু আমরা দেখেছিলাম মুজিববাদের নামে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি ফ্যাসিবাদ কায়েম করা হয় এবং বাংলাদেশ থেকে আমাদের সকল ধরনের মানবিক অধিকার হরণ করা হয়।
সিবগাতুল্লাহ বলেন, ১৯৯০ সালে আবারো আমাদের উপর ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করা হয়। তখন আবারও আমাদের ঘাড়ে স্বৈরাচার চেপে বসে। সর্বশেষ স্বৈরাচার হাসিনার সময়ও আমাদের উপর ভারতের শাসন চাপিয়ে দেওয়া হয়। সেই শাসনামলে আমাদেরকে আজাদি লড়াই করতে গিয়ে বারবার রক্ত দিতে হয়েছে। তারুণ্য বাংলাদেশে একটি শোষণের রাজনীতি কায়েম করেছিল, যা চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমাদের ছাত্রজনতা সেই শোষণের রাজনীতি ভেঙে দিয়েছে।
শিবিরের কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, ১৯৭১ সালে সামাজিক মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার ও বৈষম্যহীন একটি রাষ্ট্র উপহার দেওয়ার জন্য দলমত নির্বিশেষে সকল আপামর জনতা তাদের জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আমরা দেখেছি স্বাধীনতার এক বছর যেতে না যেতেই এ দেশের সার্বভৌমত্বকে হাইজ্যাক করেছিল ভারত। সে সময় তারা তাদের মদদপুষ্ট একজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসিয়েছিল।
নুরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭২ সালে যখন ভারত এ দেশে আগ্রাসন চালানো শুরু করলো, তখন কমিউনিস্টরা সর্বহারা পার্টি গঠন করে এ দেশের থানাগুলোতে লুটপাট-লুণ্ঠন, সাধারণ মানুষকে হত্যা, ধর্ষণ এবং গুপ্তবাহিনী গঠন করে আরেক অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছিল। তখন ওই দেশের মানুষ বুঝে নিয়েছিল এ দেশে প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ এখনও পাওয়া যায়নি। তখন মানুষ আরেকটা নতুন স্বাধীনতার জন্য আশায় বুক বেঁধে ছিল। তারপর ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল কায়েম করেছিল। পরবর্তীতে সেই বাকশাল ফ্যাসিবাদের জন্ম দিয়েছিল।
তিনি বলেন, সর্বশেষ আমরা দেখেছি শেখ হাসিনার শাসনামলেও সেই পুরোনো বাকশাল ও ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে মানুষের মুখ চেপে ধরেছিল। তবে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আবারও আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। আমরা আমাদের জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও চব্বিশের এই অর্জনকে রক্ষা করবো, ইনশাল্লাহ।
এসময় ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের প্রত্যাশা ছিল এ দেশের মানুষ মুক্তি পাবে। কিন্তু বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে তা সম্ভব হয়নি। যার কারণে বিভিন্ন সময়ে এ দেশকে আবারও স্বাধীন করতে হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। বাংলাদেশে এখনও বৈষম্যহীন সমাজ কায়েম হয়নি।
তিনি বলেন, যে উদ্দেশ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজার হাজার ছাত্রজনতা রক্ত দিয়েছে সে উদ্দেশ্য এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এখনো ছাত্রদের জীবন দিতে হচ্ছে। দু-দিন আগেও দুজন ছাত্রকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ছাত্র সমাজ আবারও রাজপথে নামতে বাধ্য হবে।
টিআই/এমএসএ