একই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুই দলের সম্মেলন, সংলাপের পর সমঝোতা
একই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলীয় সম্মেলন ডেকেছিল খেলাফত মজলিস ও আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। প্রথম জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষ্যে আগামী ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাঠ বরাদ্দের আবেদন করে এবি পার্টি। অন্যদিকে ২৮ ডিসেম্বর তৃণমূল সংগঠকদের সম্মেলনের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করে খেলাফত মজলিসও। এ মাঠ বরাদ্দ নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। অবশেষে সেই জটিলতা নিরসন হয় সংবাদ সম্মেলনে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকনের মধ্যস্থতায় সমঝোতা সংলাপের পর কাউন্সিল পিছিয়ে ১১ জানুয়ারিতে নেয় এবি পার্টি।
কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার সমাধান দাবি করে আজ রোববার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)।
আরও পড়ুন
এর আগে বেলা ১১টায় অনেকটা নাটকীয়ভাবে এবি পার্টি কার্যালয়ে এসে উপস্থিত হন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নেতারা। খেলাফতের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি দল এবি পার্টির নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা সংলাপে মিলিত হন।
সংলাপে মধ্যস্থতা করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন। দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা সংলাপের পর দুই দল জাতীয় ঐক্যের বৃহত্তর স্বার্থে স্থান বিষয়ে জটিলতা নিরসনে একমত হয়।
এসময় খেলাফত মজলিসের নেতারা এবি পার্টি নেতাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করেন বৈধভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া সত্ত্বেও তারা যেন ত্যাগ স্বীকার করে মাঠটি তাদের অনুকূলে ব্যবহারের জন্য ছাড় দেন।
খেলাফত নেতাদের অনুরোধে এবি পার্টি নেতারা বৃহত্তর ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় তাতে একমত হন। পরে দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু ও পরে বক্তব্য দেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের।
সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, প্রথম জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষ্যে আগামী ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাছে আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাঠ বরাদ্দের আবেদন করেছিলাম। খেলাফত মজলিসও ২৮ ডিসেম্বর তৃণমূল সংগঠকদের সম্মেলনের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করে।
গণপূর্ত অধিদপ্তর উভয় দলকেই পরিস্থিতি বিবেচনা করে মাঠ বরাদ্দ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চিঠি দেয়। সর্বশেষ গণপূর্ত অধিদপ্তর ২৭, ২৮ ডিসেম্বর এবি পার্টিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ করে চূড়ান্ত চিঠি দেয়। কিন্তু যাচাই-বাছাই পূর্বক মাঠ বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশভিত্তিক চিঠির ওপর নির্ভর করে খেলাফত মজলিস প্রচার-প্রচারণা, মেহমান দাওয়াত সম্পন্ন করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশ মুখে নিজেদের দলীয় সম্মেলনের গেট নির্মাণ করায় উভয় দলের সম্মেলন স্থান নিয়ে এক ধরনের জটিলতা তৈরি হয়।
এ অবস্থায় আজ রোববার (১৫ ডিসেম্বর) খেলাফত মজলিসের নেতা ও এবি পার্টির নেতাদের মধ্যে দীর্ঘ সমঝোতা বৈঠক হয়।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় খেলাফত মজলিসের নেতাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এবি পার্টি তাদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের তারিখ পরিবর্তন করে আগামী ১০ ও ১১ জানুয়ারি অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
মঞ্জু বলেন, একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান কতটা দায়িত্বহীন হলে একদল আবেদন করার পরও আরেক দলের আবেদন তারা কীভাবে গ্রহণ করে। তাদের এ দায়িত্বহীনতার কারণে আমাদের বন্ধুপ্রতিম দুই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। আজ আমরা একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এ সমস্যার সমাধান করলাম।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের বলেন, বেলা ১১টা থেকে আমরা এবি পার্টির নেতাদের সঙ্গে বসেছি, যেখানে ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন আমাদের সহযোগিতা করেছেন। আমাদের অনুরোধে এবি পার্টি তাদের কাউন্সিলের তারিখ পিছিয়ে আগামী ১১ জানুয়ারি করেছে। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
আশরাফ আলী আকন বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একত্রে আন্দোলন করেছি। আমাদের মনে ভুল বোঝাবুঝির কোনো সুযোগ নেই।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, যুগ্ম আহ্বায়ক বিএম নাজমুল হক ও যুগ্ম আহ্বায়ক লে. কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিনহাজুল আলম মিলন, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রানাসহ দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা।
জেইউ/এআইএস