আউয়ালের কারাবাস দীর্ঘ হলে অস্তিত্ব হারাবে দল?
রাজধানীর পল্লবীর চাঞ্চল্যকর সাহিনুদ্দীন হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য ও ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়ালের বিরুদ্ধে আপাতত কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে না তার দল। তবে যদি হত্যা মামলায় তার জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়, সেক্ষেত্রে এই দলটিই অস্তিত্ব হারাতে পারে বলে মনে করছেন দলের নেতারা।
ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির নেতারা বলছেন, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততার বিষয়টি এখনও প্রমাণিত নয়। রাজনৈতিকভাবে তার অনেক প্রতিপক্ষ রয়েছে। প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রের শিকারও হতে পারেন তিনি। তাই এখনই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তাকে চেয়ারম্যান রেখেই দল পরিচালনার চিন্তা-ভাবনা চলছে।
নেতারা বলছেন, শনিবার (২২ মে) দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। চেয়ারম্যানের অবর্তমানে কীভাবে দল পরিচালনা করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বৈঠকে। এছাড়া বর্তমান চেয়ারম্যান কারাগারে থাকাকালে কাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা নিয়েও আলোচনা হবে।
পল্লবীর এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে চেয়ারম্যান এম এ আউয়ালের সম্পৃক্ততা কতটুকু, প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না- এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে দলীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না তা নিয়েও ভাবছেন দলটির নেতারা।
ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির মহাসচিব নুরুল ইসলাম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত মনে করছি এ হত্যাকাণ্ডে চেয়ারম্যানকে (এম এ আউয়াল) ফাঁসানো হয়েছে। তিনি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রের শিকার। আমরা র্যাবকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাব।
তিনি বলেন, আগামীকাল (শনিবার) দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। চেয়ারম্যানের অবর্তমানে দল কীভাবে পরিচালনা করা হবে এবং কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হবে কি না সে বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির একাধিক সূত্র বলছে, দলের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এম এ আউয়ালের কারাবাসের সময়সীমার ওপর। কারণ দলের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অর্থের মূল যোগানদাতা ছিলেন চেয়ারম্যান নিজেই। তার ইচ্ছায় একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ১৫টি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স ভেঙে দিয়ে ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি গঠন করা হয়। এরপর থেকে দলের চেয়ারম্যানকে কেন্দ্র করেই কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। এখন চেয়ারম্যানের কারাবাস দীর্ঘ হলে স্থবির হয়ে পড়বে দলের কার্যক্রম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির এক নেতা বলেন, আসলে আমাদের দল পরিচালনাই হতো চেয়ারম্যানকে কেন্দ্র করে। তিনিই দলের সব কর্মকাণ্ডে অর্থ ব্যয় করতেন। ফলে, তাকে বাদ দিলে তো দল অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যাবে।
তিনি বলেন, দলের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, এ হত্যা মামলার সঙ্গে আউয়ালের জড়িত থাকার বিষয়টি সত্য নাকি মিথ্যা। নাকি কেউ তাকে ফাঁসাচ্ছে। যদি মনে হয়, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার, তবে তার মুক্তির দাবিতে দলের পক্ষ থেকে কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। আর যদি হত্যা মামলায় তার জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়, সেক্ষেত্রে হয়তো কিছুদিন পর দলই অস্তিত্ব হারাবে।
গত ১৬ মে রাজধানীর পল্লবীতে শিশুসন্তানের সামনে বাবা সাহিনুদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় সাহিনুদ্দিনের মা আকলিমা বেগম পল্লবী থানায় ২০ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আউয়ালকে। বর্তমানে তিনি চার দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।
এএইচআর/আরএইচ/জেএস