হাসিনা-কাদেরেই আস্থা, আপাতত নিশ্চুপ থাকার কৌশল
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করার গুঞ্জন চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এমন গুঞ্জনকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন দলটির একাধিক সিনিয়র নেতা।
তাদের ভাষ্যমতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের নেতৃত্বের কোনো পরিবর্তন হবে না। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের থাকবেন। সময় ও পরিস্থিতি বুঝে কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্বের পরিবর্তন হতে পারে। এখন দলের নেতাকর্মীদের মামলা-হামলা থেকে নিরাপদে রাখাই আমাদের লক্ষ্য।
দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, দলের সভাপতি আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাই থাকবেন। নেতৃত্ব পরিবর্তন নিয়ে আমরা এখনই ভাবছি না। এখন আমরা দলকে গোছানোর বিষয়ে পরিকল্পনা করছি। ফেসবুকে যা চলছে বা যে গুঞ্জনটি শোনা যাচ্ছে সেটি গুজব।
আরও পড়ুন
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক পোস্টে বলা হয়, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হচ্ছে। আবার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কে কাকে নেতৃত্ব দেবে? আগে তো দল টিকিয়ে রাখতে হবে। কর্মীরা হামলা-মামলায় পড়ছে। তাদের আগে নিরাপদ রাখতে হবে। এখন আর আগের মতো হুটহাট কর্মসূচি দিলে হবে না। অনেক ভেবে-চিন্তে কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যকে হত্যা করা হয়। দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বিদেশে অবস্থান করার সময়ই ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনা দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপরই তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ১৯৮১ সালে দলের অবস্থা বর্তমানের চেয়ে খারাপ ছিল। সেই সময় দেশে না থেকেও শেখ হাসিনাকে দলের হাল ধরতে হয়। সেই তুলনায় এখনের অবস্থা ভালো।
এদিকে আওয়ামী লীগের একটি অংশ দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বের অবসান চান।
আরও পড়ুন
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দায়ী। তার কথার লাগাম ছিল না। তার কারণে দলের এই পরিণতি। তার পরিবর্তে একজন জনপ্রিয় নেতাকে দায়িত্ব দিতে হবে। এখন অনেক নেতাই পলাতক রয়েছেন। সেক্ষেত্রে কর্মীদের সঙ্গে যিনি যোগাযোগ করতে পারবেন; এমন কোনো নেতার প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ২০০৭ সালের ১/১১'র সময় যেভাবে দলের হাল ধরেছিলেন তখনকার দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই আশরাফুলের মতো একজন নেতার খুব প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ এমন একজন নেতাকেই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে খুঁজছে। প্রয়োজনে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। নেতারা আত্মগোপনে আছেন, কর্মীদের পাশে কেউ নেই। কর্মীদের সক্রিয় রাখতে হলে দেশের মধ্যে কাউকে না কাউকে দায়িত্ব দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, সরকার পদত্যাগের একদফা দাবিতে তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ফলে আওয়ামী লীগের টানা দেড় দশকের শাসনের অবসান ঘটে। সরকার পতনের কারণে রাজনৈতিকভাবে ভেঙে পড়া দলটিকে আবারও চাঙা করতে এবং সব নেতাকর্মীকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। এক্ষেত্রে ১৫ আগস্ট শোক দিবস ঘিরে পরিকল্পনা সাজিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু সেদিন কোনো নেতাকে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। হাতেগোনা কয়েকজন ধানমন্ডি ৩২ নম্বর গেলেও ছাত্রদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। তারপর থেকেই অনেকটা নিশ্চুপ রয়েছে দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকা দলটির নেতাকর্মীরা।
এমএসআই/এমজে