জামিন কারও দয়া-মায়া নয়, অধিকার : বিশিষ্ট নাগরিক
জামিন কোনো দয়া-মায়ার বিষয় নয়, জামিন পাওয়া মানুষের অধিকার বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা বলেছেন, আজ বিচারক ও আদালতগুলো সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু পাকিস্তান আমলেও কাউকে গ্রেফতার করা হলে নিম্ন আদালতেই জামিন দিয়ে দেওয়া হতো, হাইকোর্টে যাওয়া লাগতো না। অথচ আজ আমাদের ৫৯ জন ছাত্র জামিন পাচ্ছে না।
শনিবার (৮ মে) দুপুরে ‘প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি এবং গ্রেফতার হওয়া ছাত্রদের ঈদের আগেই জামিনে মুক্তির দাবিতে নাগরিক সংবাদ সম্মেলন’-এ বক্তারা এসব কথা বলেন। গত কয়েক মাসে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনসহ বিভিন্ন মামলায় দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫৯ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের ঈদের আগে মুক্তি দিতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছে নাগরিক সমাজ।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ডা. কামাল হোসেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়াদ সাকি।
সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে গণফোরামের সভাপতি আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেন, ছাত্রদের জামিন দেওয়া উচিত। জামিন অধিকারের বিষয়, কোনো দয়া-মায়ার বিষয় না। ছাত্র সমাজ সময় উপযোগী বিষয়গুলো নিয়ে জনমত গঠন করে, আন্দোলন করে। এগুলোকে আমরা সব সময় উৎসাহিত করেছি। তাদের অবশ্যই জামিন দেওয়া উচিত।
জামিন নিয়ে আমাদের ঐতিহ্য আছে উল্লেখ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, নিম্ন আদালতগুলো এখানে একটি সাহসী ভূমিকা রেখেছে। অনেক সময় তারা জামিন দিয়ে..। আমাদের মনে আছে, অতীতে… ব্যাপক আন্দোলনের সময় নেতাদের বক্তব্যের কারণে জেলে নেওয়া হতো। তখন আবেদন করলে সঙ্গে সঙ্গে জামিন দেওয়া হতো। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হলো, মানুষজনকে কারাঅন্তরীন করে রাখা হলো। তখন এই জামিনে যে একটি শক্তি ছিলো, তখন সেটা আমরা দেখিয়েছিলাম। যাকেই ধরা হোক, সঙ্গে সঙ্গে নিম্ন আদালত জামিন দিয়ে দিত, হাইকোর্টে আসা লাগতো না।
সংবাদ সম্মেলনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জামিন আমাদের মানবিক ও আইনগত অধিকার। আজ আমাদের মূল সমস্যা হলো- বিচারকরা বিবেকবান নন। তারা অত্যাধিকভাবে সরকার ও পুলিশ নিয়ন্ত্রিত। কোর্টে গেলে বলে, সরকার না বললে তো হবে না। আজ এক মাস হয়ে গেছে এখনও মামলা উঠেনি। তারপর একই ধরনের মামলা ৫টা দেওয়া আছে। তখন ৫টার জন্যই জামিন নিতে হয়। এক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন পরই ঈদ। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেছি। সেই সঙ্গে প্রধান বিচারপতিকেও বলেছি, সাংবিধানিক অধিকার ও ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই ছাত্রদের ঈদের আগেই জামিনের ব্যবস্থা করুন। মনে রাখতে হবে এই ছাত্ররাই আজকের বাংলাদেশের সৃষ্টি করেছে। তারা বাংলা ভাষার আন্দোলন করেছিলো বলেই বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এএইচআর/এমএইচএস