নেতৃত্বে পুরাতন কমিটির একাংশ, সালাম-ডোনার-আমানের ব্যর্থতা কী?
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ এবং বরিশাল ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কমিটির মধ্যে ঢাকা মহানগরের দুই অংশের নেতৃত্বে এসেছেন আন্দোলনে ব্যর্থতার অভিযোগে ভেঙে দেওয়া পুরাতন কমিটির শীর্ষ নেতাদের একাংশ। যার ফলে কমিটি ঘোষণার পর থেকে বিএনপি নেতাদের মধ্যে বিভিন্ন কানাঘুষা ও সমালোচনা চলছে। একাধিক নেতা প্রশ্ন তুলছেন— তাহলে কি ভেঙে দেওয়া কমিটির এক নেতা ব্যর্থ আরেক নেতা সফল ছিলেন?
রোববার (৭ জুলাই) বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে জানানো হয়, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরবকে আহ্বায়ক ও বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ফুটবলার আমিনুল হককে সদস্য সচিব করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে আমিনুল হক গত ১৩ জুন মধ্যরাতে ভেঙে দেওয়া মহানগর উত্তর বিএনপির কমিটিতে সদস্য সচিব পদে ছিলেন। তার সঙ্গে থাকা কমিটির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান ও ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম ডোনার নতুন কমিটিতে বাদ পড়েছেন।
অন্যদিকে ভেঙে দেওয়া কমিটির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুকে আহ্বায়ক এবং সাবেক যুগ্ম সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনকে সদস্য সচিব করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির দুই সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে বাদ পড়েছেন গত কমিটির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম।
আরও পড়ুন
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক কমিটির দুই নেতা মজনু ও তানভীর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠ। অথচ আন্দোলনের ব্যর্থতা নিয়ে আব্বাসকেও বিদায় নিতে হয়েছিল। এখন তার অনুসারীরা সফল হবেন কি না সেটা দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে
বিএনপি নেতারা বলছেন, ঢাকা মহানগরের নতুন দুই কমিটির শীর্ষ চার নেতার মধ্যে তিনজনই গত কমিটিতে শীর্ষ পদে ছিলেন। এ ছাড়া নতুন করে যুক্ত হওয়া যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরবও ব্যর্থতার অভিযোগে যুবদল থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। এ অবস্থায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে— নতুন কমিটি দিয়ে কার্যকর কিছু হবে নাকি এটা হোম ওয়ার্ক?
একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক কমিটির দুই নেতা মজনু ও তানভীর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠ। অথচ আন্দোলনের ব্যর্থতা নিয়ে আব্বাসকেও বিদায় নিতে হয়েছিল। এখন তার অনুসারীরা সফল হবেন কি না সেটা দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে।
ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতারা বলছেন, নির্বাচনের আগে আন্দোলনগুলোর মধ্যে গত বছরের ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি সর্বপ্রথম ব্যর্থ হয়। এ সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব ছিলেন তানভীর আহমেদ। কিন্তু ব্যর্থতার দায়ভার তো তানভীরের উপর এলো না। একইভাবে ২৮ অক্টোবরের পল্টনের মহাসমাবেশ ব্যর্থ হওয়া এবং তারপর অনেক দিন কারাগারের বাইরে ছিলেন আমিনুল হক। সেই সময়ের ব্যর্থতার দায়ভার তো আমিনুল হককেও নিতে হয়। আর রফিকুল আলম মজনু কোনও আন্দোলনে সফল হয়েছেন কি?
তারা আরও বলছেন, নতুন কমিটিতে যেহেতু পুরাতন কমিটির শীর্ষ তিন নেতা রয়েছেন, তাহলে ধরে নিতে হবে আন্দোলনের ব্যর্থতার দায়ভার শুধু সালাম-আমান ও ডোনারের। ব্যর্থতার দায় নিয়ে শুধু তাদেরকে বিদায় নিতে হচ্ছে। আর বাকিরা বহাল তবিয়তে ফিরে এসেছেন।
ভেঙে দেওয়া কমিটির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুস সালাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যর্থতার অভিযোগে আগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়নি। ব্যর্থতার অভিযোগে কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে, পার্টির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কি এমন লেখা ছিল? ছিল না।
তিনি বলেন, সংগঠনকে আরও কার্যকর ও গতিশীল করতে আগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এটা যে কোনো দল যে কোনো সময় করতে পারে। নতুন কমিটিতে আগের কমিটির লোকজন আছেন। নতুন করে কেউ কেউ যুক্ত হয়েছেন। আগামীতে আরও হবেন।
ঢাকা মহানগরের নতুন দুই কমিটির শীর্ষ চার নেতার মধ্যে তিনজনই গত কমিটিতে শীর্ষ পদে ছিলেন। এ ছাড়া নতুন করে যুক্ত হওয়া যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরবও ব্যর্থতার অভিযোগে যুবদল থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। এ অবস্থায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে— নতুন কমিটি দিয়ে কার্যকর কিছু হবে নাকি এটা হোম ওয়ার্ক?
ভেঙে দেওয়া কমিটির আরেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম ডোনার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যর্থ হওয়ার কারণে কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল এমন কথা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একবারও বলেননি। তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছিল ব্যর্থতার অভিযোগে কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এটা তো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কথা ছিল না।
ভেঙে দেওয়া কমিটির নেতাদের নতুন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং কমিটি কেমন হয়েছে— জানতে চাইলে ডোনার বলেন, তারা আগে কাজ করুক, তারপর বলব। আর কমিটি তো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একা করেননি। নিশ্চয়ই অনেকের মতামত নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ভেঙে দেওয়া কমিটির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আব্দুস সালামকে হয়ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান করা হতে পারে। কিন্তু ফরহাদ হালিম ডোনারকে কেন কয়েক মাসের জন্য মহানগরের রাজনীতিতে আনা হলো, আবার এখন কেন তাকে বাদ দিল সেটা বোধগম্য নয়। তাকে যদি মহানগরের রাজনীতিতে স্থায়ী করা না হয়, তাহলে কী দরকার ছিল নিয়ে আসার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক যুগ্ম মহাসচিব বলেন, মানুষ ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে সফলতার দিকে যায়। আর আমরা দিনে দিনে অধঃপতনের দিকে নামছি। যাদেরকে ব্যর্থতার অভিযোগে বাদ দেওয়া হয়েছিল, তাদেরকে দিয়েই যদি নতুন কমিটি করা হয় তাহলে সফলতা কোন দিক থেকে আসবে, এটা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই বলতে পারবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে মেয়র পদ থেকে বাদ দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ ঢাকাকে দুই ভাগ করে। তাদের সেই পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে বিএনপি ঢাকা মহানগরকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে বিভক্ত করে। ঢাকা মহানগরে একটি কমিটি করে সেই কমিটির অধীনে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম চার ভাগ করে দেওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু সেটা না করে আওয়ামী লীগের দেখানো পথে হেঁটেছে বিএনপি।
এএইচআর/এমজে