বাজেটে সাধারণ জনগণের স্বার্থের প্রতিফলন চায় ন্যাপ
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) বাংলাদেশ।
সোমবার ( ৩ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়ার সই করা এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।
নেতৃদ্বয় বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সরকারের প্রণীত বাজেট হতে হবে দেশের জনগণের স্বার্থরক্ষার বাজেট। আসন্ন বাজেটে অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য উত্তোরনে বিশেষ বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পাসপোর্ট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, কৃষক-শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা এবং বিভিন্ন প্রকল্পগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশ ন্যাপের ১১দফা সুপারিশগুলো গুরুত্ব দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
সুপারিশগুলো হলো :
১. স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি নির্ভর খাতগুলোকে ভ্যাটের আওতামুক্ত করা, জনগণের সামর্থ্য ও বাস্তবতার আলোকে কর নির্ধারণ করা।
২. বিদ্যুৎ- কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের মূল্য হ্রাস করা। বিদ্যুত-গ্যাস-জ্বালানি-তেল-পানির মূল্য কমিয়ে জনগণের ওপর থেকে বাড়তি আর্থিক চাপ কমানোর ব্যবস্থা করা।
৩. নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বাজেটে স্বাস্থ্যখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা যেমন জরুরি, তেমনি এ খাতে দুর্নীতি ও লুটপাটের লাগাম টেনে ধরার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী বিন্যাস করতে হবে। সব ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বীমা চালু করার উদ্যোগ নিতে হবে।
৪. বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হলো কৃষি। এক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে। বাজেটের ১০ শতাংশ বরাদ্দ প্রদান ও কৃষিকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করা, সরকারের খাদ্য মজুদ করার সামর্থ্য বৃদ্ধি করা, অতি দরিদ্র মানুষের জন্য সারা বছর খাদ্য সহায়তা চালু রাখা, বাজেটে সারের ভর্তুকি কমিয়ে কৃষকদের নগদে ভর্তুকি প্রদান করা, কৃষিপণ্য মূল্য কমিশন গঠন করা, দুর্যোগের সময়ে কৃষি বাজার ও মূল্য ব্যবস্থাপনার জন্য বহু মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সমন্বয় কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নিতে হবে।
৫. দারিদ্র দূরীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি- দারিদ্র দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তার জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে।
৬. প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ সবার জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে ভর্তুকি মূল্যে দরিদ্র জনগণকে স্বচ্ছতার সঙ্গে তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা।
৭. ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সুদমুক্ত সহজ ঋণ বরাদ্দ দিতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ও পোল্ট্রি, ফিসারিজসহ গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথাযথ গুরুত্ব ও পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে।
৮. শিল্পকারখানা, ব্যাংকিং সেক্টরের বিনিয়োগকে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও দুর্নীতিমুক্ত করা। এক্ষেত্রে ঋণ-সীমা পুনর্বিবেচনা করা। সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো সততা, স্বচ্ছতা ও কার্যকরভাবে কাজে লাগানো।
৯. প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও পরিবেশ- দেশ ও দেশের জনগণকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিবেশের বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবেশ দূষণ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী প্রকল্প বন্ধ ও ব্যাপক বনায়নের দিকে নজর দিতে হবে।
১০. সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট বিশেষকরে বেড়িবাঁধ নির্মাণে বাজেটে বরাদ্দ থাকতে হবে। আম্ফানে নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের পুনর্বাসনেও বাজেটে বরাদ্দ থাকা দরকার।
১১. প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, ভাসমান শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ ও সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন সেক্টরভিত্তিক বিশেষ প্রণোদনা দিতে হবে। একই সঙ্গে প্রকৃত শ্রমিকদের সেনাবাহিনীর মাধ্যমে যাচাই-বাছাই শেষে তাদের ডাটাবেজ তৈরি করে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা, কর্মহীন শ্রমিকদের অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে জামানত ছাড়া আইডি কার্ড ও ব্যক্তিগত গ্যারান্টি নিয়ে দুই বছরের মধ্যে পরিশোধের জন্য সুদবিহীন সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা ঋণ প্রদান করতে হবে।
এমএম/কেএ