নির্বাচনের পর সংকট উতরে যায়নি, আরও বেড়েছে : মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার মনে করছে নির্বাচনের পর সংকট উতরে গেছে। কিন্তু সংকট উতরে যায়নি বরং আরও বেড়েছে। এখনও যদি তারা অনুধাবন না করে তাহলে সামনে সংকট আরও ঘনীভূত হবে।
রোববার (১২ মে) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
ফখরুল বলেন দেশে একের পর এক ডামি নির্বাচন হচ্ছে। তারা প্রার্থী বাছাই করছে, তারাই বিরোধীদল কারা হবে তা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। এ সরকারের কোনো জবাদিহিতা নেই, কোনো ম্যান্ডেট নেই। তাদের মধ্যে এমন দাম্ভিকতার সৃষ্টি হয়েছে যে, আমাদের তো জনগণের কোনো দরকার নেই। জনগণের কী হলো না হলো তা নিয়ে চিন্তা নেই। ক্ষমতা ঠিক থাকতে পারলেই চলে আওয়ামী লীগের।
আরও পড়ুন
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র। সরকার পরিকল্পিতভাবে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, এটি অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। একটি রাষ্ট্র ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যখন অর্থনীতি মেরুদণ্ড ভেঙে যায়, রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। গোটা রাষ্ট্র একটি নৈরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না। তাও আবার ক্ষমতাসীন দলের ছাড়া সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সরকারের এমপি মন্ত্রীরা টাকা পাচার করে সেটি বিনিয়োগ করেছে বিদেশে, অথচ বাংলাদেশের মানুষের অবস্থা খারাপ।
‘বাংলাদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এটি বললে আওয়ামী লীগের গায়ে জ্বালা ধরে যায়। কিন্তু এটিই সত্য’ —বলেন মির্জা ফখরুল।
খালেদা জিয়ার অত্যন্ত অসুস্থ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যার কারণে ঘন-ঘন হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। এখন তিনি বাসায় থাকলেও ২৪ ঘণ্টা মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ট লু বাংলাদেশ সফর নিয়ে এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, কে এলো তাতে আমাদের ইন্টারেস্ট নেই। জনগণই বিএনপির শক্তি। সরকার মনে করছে নির্বাচনের পর সংকট উতরে গেছে। কিন্তু সংকট আরও বেড়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের পূর্বে বহু নেতাকর্মীকে একতরফা সাজা দিয়েছে আদালত। এর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছে বিএনপি। বিনা শুনানিতেও সাজা দিয়েছে সরকার। এখনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা কারাগারের রয়েছে। চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে সাজা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বিরাজনীতিকরণ করতে ২ হাজার বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দল যেন না থাকে। মানুষের সর্বশেষ আশা ভরসাস্থল হচ্ছে কোর্ট, কিন্তু সেখানেও কেউ কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না।
দেশে প্রবেশে সময় আমদানি পণ্যের মান যাচাই করা উচিত এমন দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের ম্যান্ডেটহীন সরকার তা করবে কি না, সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যায়।
ফখরুলের অভিযোগ, সরকারের সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য বিচারবিভাগকে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় ক্ষোভ প্রকাশ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, অনিয়ম দুর্নীতি এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি তার নিন্দা জানায়। অর্থনীতিখাতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি চলছে, ব্যাংকখাত ধ্বংস হয়ে গেছে। নিবর্তনমূলক আচরণ করা হচ্ছে। নিবর্তনমূলক আইন প্রত্যাহারের দাবি
স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাস্থ্য খাতেরও ভয়াবহ অবস্থা, এটা আশঙ্কাজনক। সরকার জনস্বাস্থ্য নিশ্চিতে গুরুত্ব দিচ্ছে না, অনীহা দেখাচ্ছে।
তিনি বলেন, জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে আমদানি করা সব পণ্য দেশে প্রবেশের পর পরীক্ষা নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। যদিও সরকার করবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
ভারতের ৫২৭টি পণ্যে বিষাক্ত উপাদান পাওয়া গেছে বলেও উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল
মানুষের অধিকার বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের কাছে সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই, কোনো ম্যান্ডেট নেই, সরকারের মধ্যে দাম্ভিকতা তৈরি হয়েছে সেজন্য জনগণের সমস্যা গুরুত্ব পাচ্ছে না, ক্ষমতায় টিকে থাকলেই হলো। একটা গোত্র তৈরি করেছে সরকার, যারা তাদের ক্ষমতায় রাখবে।
এএইচআর/এসএম