ভোটের ‘অঙ্ক’ না মেলায় নিষ্ক্রিয় সরকারপন্থি ইসলামি দলগুলো
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল সরকারপন্থি হিসেবে পরিচিত ৭টি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। নির্বাচনের ফলাফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে, এসব দলের কোনো প্রার্থীই জয়ী হতে পারেননি। মূলত সরকারের আনুকূল্য এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আশায় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এসব দলের নেতারা। কিন্তু নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব না মেলায় সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে এসব দলের।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, জাকের পার্টি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি। এ ৭টি দলের প্রার্থী ছিলেন ২৭৬ জন। এর মধ্যে কোনো প্রার্থীই জয়ী হতে পারেননি। অনেক প্রার্থীর জামানতও বাজেয়াপ্ত হয়েছিল।
নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ৯টি ধর্মভিত্তিক দলের নেতারা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এ সময় সরকারের সঙ্গে থেকে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা। কিন্তু নির্বাচনে বিশেষ ছাড় এবং পরবর্তীতে আর্থিক কোনো সুবিধা না পাওয়ায় দূরত্ব সৃষ্টি হয় সরকারের সঙ্গে।
দলগুলোর নেতারা বলছেন, কয়েকটি দলের আশা ছিল নির্বাচনে তাদের প্রার্থীকে বিশেষ সুবিধা কিংবা আসন ছাড় দিয়ে জয়ী করে নিয়ে আসবে সরকার। আর অন্যরা নির্বাচনে অংশ নিলে আর্থিক সুবিধা পাবে। পরবর্তীতে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে এসব দলের নেতারা বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাবেন। কিন্তু নির্বাচনে সরকার কাউকে যেমন ছাড় দেয়নি, তেমনি পরবর্তীতে কোনো আর্থিক সুবিধাও এখন পর্যন্ত দেয়নি। যার ফলে, সরকারের সঙ্গে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর দূরত্ব বাড়ছে।
আরও পড়ুন
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। দলটির চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা আমাদের দল গোছানোর কাজ করে যাচ্ছি। ঈদের পরে জনবান্ধব কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামব। আমরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে আছি। এখন সরকার যদি জোটকে সক্রিয় না করে, আমরা কী করতে পারি? তবে আমরা শেখ হাসিনা এবং সরকারের বাইরে নই।
নির্বাচনের কয়েক মাস আগে সরকারপন্থি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়। দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ কয়েক দিন অগে ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজান মাস চলছে। এখন তো ইবাদতের সময়। এ কারণে মাঠের কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে।
সরকারের সঙ্গে নিজেদের দূরত্ব তৈরির কারণ সম্পর্কে সুপ্রিম পার্টির দপ্তর সম্পাদক মো. ইব্রাহিম মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের সঙ্গে তো সরকারের কোনো জোট নেই। আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম গণতন্ত্রের স্বার্থে। এখানে সরকারের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠতা কিংবা দূরত্ব সৃষ্টিরও কিছু নেই।
সরকার ঘনিষ্ঠ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলেও চাওয়া-পাওয়ার হিসাব না মেলায় সরকার বিরোধী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা এম. এ. মতিন বলেন, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ইফতার মাহফিল করেছি। সেখানে আমরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছি। কিন্তু মিডিয়ায় না আসার কারণে আমাদের কার্যক্রম মানুষের চোখে পড়ে না। ঈদের পরে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামব।
সরকারের সমালোচনা করে এম এ মতিন বলেন, আমরা বর্তমান নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিপক্ষে। মানুষ ভোট দিতে পারছে না, ৫ শতাংশ ভোটকে ৪০ শতাংশ করেছে সরকার। এমন অনিয়মের রাজসাক্ষী হওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম আমরা?
নির্বাচনে অংশ না নেওয়া বিএনপির চরম ভুল দাবি করে তিনি বলেন, তারা অংশ নিলে সরকার এভাবে নির্বাচন করে পার পেয়ে যেত না।
জাকের পার্টির আইন বিষয়ক সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক খান বলেন, আমরা দেশটাকে ভালোবাসি, এটাই হলো রাজনৈতিক দলের বড় পরিচয়। কোনো ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমে আমরা নেই। আমরা সরকারকে সাপোর্ট করছি না। আমরা আমাদের আঙ্গিকে আছি। সরকার তাদের কাজ করবে, আমরা আমাদের কাজ করব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুটি ধর্মভিত্তিক দলের শীর্ষ নেতা বলেন, গত ২৩ নভেম্বর আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম। আশা করেছিলাম, দলের দুইজন প্রার্থীকে সরকার ছাড় দেবে। প্রধানমন্ত্রী না দিলেও সরকারের অন্য লোকদের কাছ থেকে এমন আশ্বাস ছিল। কিন্তু নির্বাচনে আমাদের ছাড় দেওয়া হয়নি। ফলে আমাদের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব বেড়েছে।
তারা আরও বলেন, সরকার আমাদের ডাকলে অবশ্যই যাব। আসলে এখন তো ধর্মীয় কোনো আন্দোলন সংগ্রাম নেই। যার কারণে সরকারের কাছেও আমাদের তেমন কদর নেই।
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে
আসন্ন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তেমন উচ্ছ্বাস না থাকলেও সরকারপন্থি ধর্মভিত্তিক দলগুলো প্রার্থী দেওয়ার চিন্তা করছে। দলগুলোর নেতারা বলছেন, ধর্মভিত্তিক দলগুলোর তৃণমূলে সাংগঠনিক অবস্থা এমনিতে খুব বেশি ভালো নয়। ফলে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম। তারপরও বিভিন্ন এলাকায় শক্তিশালী কিছু প্রার্থী রয়েছেন, তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন। দল যতটুকু সম্ভব তাদের সমর্থন করে যাবে।
সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, এবার তো দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে হচ্ছে না। তাই কিছু জায়গায় স্বতন্ত্রভাবে আমাদের কয়েকজন নির্বাচন করবে।
নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, আমার এলাকায় আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে আমি রাজনীতি করি না। এখন যারাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তারা আমার সমর্থন চাচ্ছে। দল ও জোটের সবাই।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এএইচআর/এসকেডি