বিএনপি থাকলে নির্বাচনী কৌশল ভিন্ন হতো : ওবায়দুল কাদের
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে আসেনি। সেহেতু এখানে জোট করার প্রয়োজনীয়তা নেই। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের সমন্বয় হয়েছে। এটা আমাদের নির্বাচনী কৌশল। তবে বিএনপি নির্বাচনে থাকলে নির্বাচনী কৌশল ভিন্ন হতো।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আজ দলীয় প্রার্থীসহ সব প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করছে নির্বাচন কমিশন। তারপর শুরু হচ্ছে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২০ ডিসেম্বর হযরত শাহজালাল ও শাহ পরানের মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে সিলেটে নির্বাচনের প্রথম জনসভা করবেন।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী ২৭ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হবে।
তিনি বলেন, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২৭টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আমরা জাতীয় পার্টির জন্য ২৬ আসন থেকে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছি। শরিক দলের প্রার্থীরা ছয়টি আসনে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করবেন। সবমিলিয়ে ২৬৩ জন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ১৪ দলসহ নৌকা প্রতীকে থাকছেন ২৭০ জন।
দেশের জনগণ ভোট প্রদানের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে— মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন পর্যন্ত ১৮৯৬ জন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। স্বতন্ত্র আছে ৩৫৭ জন। নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে। আশা করি, একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের প্রতি ইঙ্গিত করে কাদের বলেন, ‘বিএনপি নেতা নজরুল সাহেব বলেছেন, সোমবারের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে কারা এমপি হচ্ছেন। এ ধরনের ভাগবাটোয়ারা করে নির্বাচন বিএনপির আমলেই সম্ভব। তারা তো বঙ্গবন্ধুর খুনি রশিদ, নূর, হুদা ছাড়া প্রার্থীই পাননি। উনি এখন জ্যোতিষী, গণকের ভূমিকা নিচ্ছেন। এতই যদি ভবিষ্যৎ পড়তে পারেন, তাহলে জানান কবে তারেক রহমান দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হবে।’
‘আমরা তো বিএনপিকে নির্বাচনে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম। তারা আসেনি। নির্বাচনে আসলে একটা সম্ভাবনা নিয়ে তো থাকতে পারতেন। ঢালাওভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গাজীপুরে রেল লাইন কাটার নাশকতার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে একজন কাউন্সিলর। গ্রেপ্তার হওয়ার সাতজনই বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মী।’
সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেছেন ৪০ বুদ্ধিজীবী। এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আসলে তারা (বুদ্ধিজীবী) বিএনপির রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। তাদের বিবৃতি দেওয়ার আগে উচিত ছিল বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো। যখন তাদের বিবৃতি দেওয়া উচিত ছিল তখন তারা দেয়নি। তাদের উচিত ছিল বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না বলে তিরস্কার করা।’
‘আমি ৪০ জন বিশিষ্ট নাগরিককে বলব, আপনারা কেন জ্বালাও-পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেননি? দেশে যে নাশকতা হচ্ছে, গাজীপুরের ট্রেন লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে, পুলিশকে মারা হলো, আনসারকে মারা হলো, কোর্টের এজলাসে গিয়ে হামলা চালানো হলো, এতগুলো বাসে আগুন দেওয়া হলো, ট্রেনের ফিশপ্লেট খুলে ফেলা হলো— এসব ব্যাপারে ৪০ নাগরিক নীরব কেন?’
হরতাল-অবরোধ কি তারা সাপোর্ট করেন— এমন প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘যে বুদ্ধিজীবীরা আজ জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল-অবরোধ সাপোর্ট করছেন তারা আসলে বিএনপির দালাল। ২৭টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, তারপরও তারা বলছেন একতরফা নির্বাচন। আসলে বিএনপির জন্য তাদের মন কাঁদে। জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা দেশের জনগণকে নিয়ে ভাবে না। তারা কায়েম করতে চায় বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ, যারা বাংলাদেশের জন্মের চেতনাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি।’
জাতীয় পার্টির সাথে আসন সমঝোতা হলে প্রতিপক্ষ কারা— জবাবে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ থেকে তারা সাপোর্ট চেয়েছে। আরও বড় সংখ্যায় আসন চেয়েছিল। আমরা ২৬টি আসনে সমঝোতা করতে পেরেছি। সেজন্য আমরা নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করেছি। বাকি আসনগুলোতে তারা লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিযোগিতা করবে। আসন সমঝোতা নতুন কিছু নয়। ২০১৪ ও ২০১৮-এর নির্বাচনেও এমন সমঝোতা হয়েছিল। তবে, এবার আমরা খুব কমই সহযোগিতা করতে পেরেছি।’
জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া ২৬টি আসনে নৌকার প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২৬টি আসনে নৌকা প্রত্যাহার করেছি। তারা তাদের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। তারা তো নৌকা চায়নি।’
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে নির্বাচনে যাচ্ছে কি না— জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে আসেনি। সেহেতু এখানে জোট করার প্রয়োজনীয়তা নেই। জাতীয় পার্টির সাথে আমাদের সমন্বয় হয়েছে। এটা আমাদের নির্বাচনী কৌশল। আমরা কৌশলটা এভাবেই ঠিক করেছি। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা রাজনৈতিকভাবে বেশি আলোচনা করেছি। এজন্য আমরা আসন সমঝোতা করেছি। এ নির্বাচনে এত প্রার্থী, এত দল; তারপরও এটাকে তারা একতরফা নির্বাচন বলছে। যা নির্লজ্জ মিথ্যাচার।’
‘নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি নেতাদের মুক্তি’— কৃষিমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা তার ব্যক্তিগত। আওয়ামী লীগ কোনো দেউলিয়া দল নয়। আওয়ামী লীগ দলীয় নিয়মনীতি ভঙ্গ করে এ ধরনের উদ্ভট প্রস্তাব বিএনপিকে দেবে, এটা সঠিক নয়। এ ধরনের কোনো প্রস্তাব আমাদের সরকারও দেয়নি, আমাদের দলও দেয়নি।’
‘বিএনপি বলছে, তাদের ২০ হাজার নেতাকর্মী জেলে আছে। আমরা তা স্বীকার করি না। তাদের কত নেতাকর্মী জেলে— হিসাবটা আমি মির্জা ফখরুল ইসলামের কাছে অনেকবার চেয়েছি। একটা উদ্ভট সংখ্যা বলে দিল, সেটা সবাই বিশ্বাস করবে, এমন নয়। এত লোক গ্রেপ্তার হয়নি। আর যারা পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করেছে, হাসপাতালে হামলা করেছে, তাদের তো আইনের আওতায় আসতেই হবে। কাউকে নির্বাচনে আনার জন্য অপরাধটা ক্ষমা করতে হবে— এমন দল আওয়ামী লীগ নয়।’
যেসব আসন থেকে নৌকার প্রার্থীদের প্রত্যাহার করা হয়েছে তাদের জন্য দলের কোন বার্তা আছে কি না— জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাদের আমরা কী বার্তা দেব, এটা আমাদের ব্যাপার।
বিএনপি নেতা মঈন খানের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে ভাগাভাগির কোনো বিষয় নেই। নির্বাচনের জোট আগেও হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য আমরা একটা কৌশল নিয়েছি। এজন্য এ ব্যবস্থা। সবার সাথে যুদ্ধ লাগিয়ে, নির্বাচন প্রতিহত করার ভূমিকা নেবে— এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমরা কৌশল নিয়েছি। কৌশলটা এখন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের অনুকূলে।’
বিএনপি নেতা মঈন খানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনাদের এসব বক্তব্য জনগণ বিশ্বাস করে না। যারা ভোট দেবে তারাও বিশ্বাস করে না। আমি বলব, ৭ জানুয়ারি সারা বাংলাদেশের দিকে একটু নজর রাখবেন। ভোটকেন্দ্রের দিকে একটু তাকাবেন। তাহলে বুঝতে পারবেন এ দেশের মানুষ কতটা নির্বাচনের পক্ষে।’
এমএসআই/এসএসএইচ