কারাগারে মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা : রিজভী
সারা দেশের কারাগারগুলোতে বিএনপির নেতাকর্মীরা মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সোমবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, কেউ যেন টু-শব্দও না করতে পারে সেজন্য কারাগারের ভেতরে-বাইরে চলছে বিরোধী দলের সক্রিয় নেতাকর্মীদের ওপর নানাবিধ অমানবিক আচরণ। কারাবন্দিদের নির্যাতন করা হচ্ছে অবর্ণনীয় পৈশাচিক কায়দায়… বন্দিদের চিকিৎসা না দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। অসুস্থ বন্দিকে হাত-পায়ে শিকল পরিয়ে কারা হাসপাতালে ফেলে রাখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কারাগারে দমবন্ধ করা সেলে দিনরাত লকআপে রেখে গরু-ছাগলের খাবারের জন্য প্রযোজ্য অতি নিম্নমানের খাবার দিয়ে অসুস্থ বানিয়ে নেতাকর্মীদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। মৃত্যুর দায় এড়াতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গল্প সাজিয়ে মিথ্যাচার করছে।
হুঁশিয়ারি দিয়ে রিজভী বলেন, জেল হেফাজতে মৃত্যুর দায় এড়াতে পারবে না শেখ হাসিনা এবং তার মাফিয়া চক্রের কারা কর্মকর্তারা। প্রতিটি মৃত্যু ও হত্যার জন্য তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর সরকারের দমনপীড়নের বিষয়ে সম্প্রতি ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রতিবেদনটি তুলে ধরে রিজভী বলেন, সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনী সাম্প্রতিককালে ধর-পাকড় চালিয়ে হাজার হাজার বিরোধী নেতা, কর্মী, সমর্থক দিয়ে বাংলাদেশের কারাগারগুলো ভরে ফেলেছে। কারাগারে তাঁরা অসুস্থ হচ্ছেন এবং ধুঁকে ধুঁকে সেখানে মরছেন।
দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দি ধারণ ক্ষমতা ৪৩ হাজারের কম হলেও সেখানে দেশের গণমাধ্যমের হিসেবে প্রায় ৮৮ হাজার বন্দি রয়েছে উল্লেখ করেন রিজভী। তিনি বলেন, অবৈধ দখলদার সরকার তাদের দখলদারিত্ব ধরে রাখার জন্য পুরো দেশকে নরকে পরিণত করেছে। ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপত্তা নেই।
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীসহ চলতি বছরে জেল হেফাজতে প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী- জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে জেল হেফাজতে ৯৩ জন বন্দির মৃত্যু হয়েছে। যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সর্বোচ্চ। গত বছর জেল হেফাজতে মৃত্যু হয় ৬৫ জনের। যাঁদের বেশিরভাগই বিএনপি নেতাকর্মী। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিরোধীদের বিরুদ্ধে চলমান ক্র্যাকডাউনের মধ্যে চলতি ডিসেম্বরে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই বিএনপি নেতাকর্মী।’
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মম নির্যাতন করে অসুস্থ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।
‘বাজারে সিন্ডিকেটের নৈরাজ্য’
রিজভী বলেন, দেশে পেঁয়াজ-রসুন-ডাল-চালের দাম নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই। ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি দাম নির্ধারণ করছেন। সরকারের কোনো বিধি-বিধান তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। সরকার যদি নির্বাচিত হতো বা জনগণের ভোটের প্রয়োজন পড়তো তাহলে দলীয় ব্যবসায়ীদের হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতো না।
ভারতের বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘আসন্ন লোকসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশটির সরকার বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা ভোটারদের মনোতুষ্টির জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে। আর শেখ হাসিনা ভোট ডাকাতির নতুন ফন্দি আটা নিয়ে ব্যস্ত। শেখ হাসিনা মনে করছেন ভোটাররা গোল্লায় যাক… আমার সোনার হরিণ চাই। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি বানিয়ে রাখছে… এই নিয়ে তার কিছু আসে যায় না। আওয়ামী সমর্থক ব্যবসায়ীদের কর্মকাণ্ড এক নীরব দুর্ভিক্ষের মধ্যে দিনাতিপাত করছে দেশের কোটি কোটি মানুষ।’
প্রতিদিনের মতো গত ২৪ ঘণ্টায় ১১০ জনের অধিক নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছে দাবি করে রিজভী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫টি মামলায় ৪৩৬ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
এএইচআর/এমজে