এবার ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা জামায়াতের
নির্বাচন কমিশনকে আজ্ঞাবহ উল্লেখ করে নীল-নকশার তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে আগামী রোববার (১৯ নভেম্বর) ও সোমবার ( ২০ নভেম্বর) দুইদিনের হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর আগে গণঅধিকার পরিষদ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি দুইদিনের (রোববার ও সোমবার) হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম এক বিবৃতিতে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের মুজিবুল আলম সই করা এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় বিরোধীদল ও দেশবাসীর মতামত উপেক্ষা করে জনধিকৃত ও সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। সমগ্র জাতি এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের অধিকাংশ বিরোধী দল তথাকথিত নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফরমায়েশি তফসিল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।
‘আমরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলতে চাই, বিরোধীদলের মতামত অগ্রাহ্য করে ঘোষিত তথাকথিত তফসিল দেশকে অস্থিতিশীল ও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে। সংলাপের পথ রুদ্ধ করবে। রাজনীতিতে ঘোর অমানিশা নেমে আসবে। একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের ফলে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতির দায় ষড়যন্ত্রকারী সরকার এবং আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।’
মাওলানা এটিএম মাছুম বলেন, গণতন্ত্রের লেবাসধারী স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার নাগরিকদেরকে ভোট দিতে দেয়নি। সাজানো প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে। জামায়াতসহ বিরোধীদলকে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি দাবি করে বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার জন্য আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ বিরোধীদলের সব শীর্ষ নেতা এবং গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদেরকে মুক্তি দিতে হবে। মিথ্যা ও সাজানো মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সভা-সমাবেশ ও মিটিং করার সুযোগ দিতে হবে। জামায়াতের তালাবদ্ধ কেন্দ্রীয় অফিসসহ বন্ধ সব শাখা অফিস খুলে দিতে হবে।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিরোধীদলগুলো এখনো আন্দোলন করছে উল্লেখ করে মাওলানা এটিএম মাছুম বলেন, দেশি-বিদেশি মহল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোট চুরিতে অভ্যস্ত সরকারি দল সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপই করছে না। স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকার গোয়ার্তুমি করছে এবং ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনের দিকেই হাঁটছে। বিদগ্ধ মহল কমিশনের তফসিল ঘোষণাকে ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনের গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ মনে করছেন।
তিনি বলেন, দেশবাসী মনে করে, ষড়যন্ত্রমূলক নীল-নকশার তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন মূলত বিরোধীদলকে নির্বাচনের বাইরে রেখে অতীতের মতো শাসকদলকে জিতিয়ে আনার কৌশল নিয়েছে। গণতন্ত্রকামী সংগ্রামী জনতা সরকারের বিনা ভোটে ক্ষমতা দখলের দিবাস্বপ্ন পূরণ হতে দেবে না। জনগণের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে কমিশনকে অবশ্যই এ তফসিল প্রত্যাহার করতে হবে। সব দলের মধ্যে ঐকমত্য ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত করে কমিশনকে নতুনভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের গণতন্ত্র হত্যার ফরমায়েশি তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে সারা দেশে আগামী রোববার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
ঘোষিত হরতাল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে সফল করে তোলার জন্য জামায়াতের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সংগ্রামী দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।
জেইউ/এমএ