করোনা আক্রান্ত খালেদা জিয়াকে মুক্তির আহ্বান জাফরুল্লাহ’র
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মানবিক হওয়া খুব কঠিন কাজ বলে মনে করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্ট্রি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তবুও তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, খালেদা জিয়ার করোনা ধরা পড়েছে। এখন যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে, যেহেতু করোনা আক্রান্ত হয়েছে তাই তাকে মুক্ত করে দিন। যাতে উনি ওনার খোলা মনে চিকিৎসা নিতে পারেন। এখানে মানবিক হতে হবে।
সোমবার (১২ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, তার (শেখ হাসিনা) পুরো পরিবারকে দেশের একটা শ্রেণি হত্যা করেছিল। চিন্তা করা দরকার, তার বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন ছিল। বঙ্গবন্ধুর এই হত্যাকাণ্ডের আমি তীব্র নিন্দা করি। তার কষ্টটা অন্যদের থেকে অনেক বেশি। সেই ঘটনার আগের দিন বঙ্গবন্ধু আমাকে সাভার থেকে ডেকে এনেছিলেন। প্রায় চার ঘণ্টা আলাপ করেছিলেন।
তিনি বলেন, তার (প্রধানমন্ত্রীর) উচিত হবে মানুষের প্রতি উদার হওয়া, সহানুভূতিশীল হওয়া। এই ছাত্ররা আমাদের দেশ সৃষ্টি করেছে, তাদের মুক্তি দেওয়া। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী, ইসরায়েলের মোসায়েদ এবং আপনার কিছু পা চাটা গোয়েন্দা বাহিনীর কথা শুনে শক্ত হওয়ার চেষ্টা করবেন না। জনগণের কাছে ক্ষমা চান, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান, ক্ষমা চেয়ে এই ছেলেগুলোকে মুক্ত করে দেন। আমরা আপনার পাশেই থাকব। আর কেউ না থাকুক রাস্তায় আমি একা দাঁড়িয়ে আপনার পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করব। ছাত্রদের আত্মীয়স্বজন যারা আছেন, তাদের বলব- আপনারা একটু ধৈর্য ধরেন। আশা করি আমরা জয় পাব। আজকে আইন একশটা হয়ে গেছে। আইনকে হতে হবে নিরপেক্ষ। আমাদের সবাইকে সংগ্রাম করে অধিকার আদায় করতে হবে।
রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি পাচ্ছি : নুর
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি এবং বাংলাদেশ ছাত্র-যুব-শ্রমিক অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক নুরুল হক নুর বলেন, আমাকে গুম করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার জন্য। এ দেশে রাজনীতি করতে এসে কি আমরা পাপ করলাম, নাকি এ দেশে জন্ম নেওয়া পাপ? মোদিবিরোধী বিক্ষোভ থেকে আটকদের মধ্যে অনেকেই ছোটখাটো চাকরি করত। কেউ ছাত্র, কেউ সাধারণ মানুষ। তাদের অনেককেই ধরে নিয়ে গেছে। যেদিন আমাকে গুম করার অপচেষ্টা করা হয়েছিল, সেদিন সেখানকার মার্কেটিংয়ে চাকরি করে একটা ছেলে যিনি আমার লাইভ দেখে সেখানে গিয়েছিলেন, সেই ছেলেটিও এখন কারাগারে। এরকম অসংখ্য নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে শুধুমাত্র একটা কারণে মামলা দেওয়া হয়েছে, কারণ তারা মোদিবিরোধী প্রতিবাদ করেছিল এবং পরবর্তীতে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল।
নুর বলেন, ২৫ মার্চ প্রায় ৪০ জনকে গ্রেফতার করেছিল, ২৭ তারিখে আমাদের ভাসানী অনুসারী পরিষদের শান্তি পূর্ণ প্রোগ্রাম ছিল সেখান থেকে আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাকে গুম করার চেষ্টা করা হয়েছে, প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার জন্য, সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করার জন্য, রাজনীতি না করার জন্য।
তিনি আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচনের সময়ও সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলাম, আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়ার মতো নেতাকে জেলে নিয়ে পুরলে তোমার মতো নুরুকে খাইতে ১০ সেকেন্ড সময়ও লাগবে না- এমন কথাও শুনেছি। আমি বলছি আপনারা যদি প্রমাণ করতে পারেন, এই ছেলেগুলো সহিংসতার সঙ্গে জড়িত আপনারা আমাকে ফাঁসি দেন মেনে নেব। আমি বলতে পারি আমাদের পরিষদের কর্মীরা কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়। সহিংসতা এড়াতে আমরা সেদিন কর্মসূচি দিয়েছিলাম পল্টনে। আমরা যখন জানতে পারলাম সেখানে ছাত্রলীগ–যুবলীগ সশস্ত্র অবস্থান নিয়েছিল আমরা লোকেশন চেঞ্জ করে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে মিছিল শুরু করি। আমাদের ইচ্ছা ছিল একটা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ দেখানো। আজ সরকার কারও কথা শুনছে না, কারও মতামত নিচ্ছে না। যে কারণে আজ দেশের এই অবস্থা।
কারাগারে গুরুত্বর নির্যাতন করা হচ্ছে দাবি করে নুর বলেন, গ্রেফতারদের সঙ্গে দেখা করে আমরা জানতে পেরেছি তাদের চোখে কাঁচামরিচ ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। অনেকের গোপনাঙ্গে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছে। কিশোর ও মোশতাকের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছিল। কারাগারে নির্যাতন করার কী কোনো আইনি বিধিবিধান আছে? নখের মধ্যে পিন ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে যেন তারা রাজনীতি না করে। এভাবে যদি মানুষকে নির্যাতন করেন, নিপীড়ন করেন, মানুষ রাজনীতি ছেড়ে দেবে। ছেড়ে দিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে বাঁচার জন্য যা প্রয়োজন তাই করবে। তখন কে কোন দিক থেকে আক্রান্ত হন সেটা বলা যাবে না। সুতরাং সামনে রমজান মাস আমি অনুরোধ করব আমাদের পরিষদের যারা হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় জেলখানায় আছে সবাইকে মুক্তি দিন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সাবেক নেতা রেজা কিবরিয়া, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট রাখাল রাহাসহ গ্রেফতার কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা।
এমএইচএন/এসএসএইচ