আ.লীগের আয়োজনে নির্বাচনে যাবে না ইসলামী আন্দোলন
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, আগেও ঘোষণা করেছি, আবারও ঘোষণা করছি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে যদি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়, তাহলে সেই নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন অংশগ্রহণ করবে না।
রোববার (১২ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় মুফতি রেজাউল করীম বলেন, সরকার তো ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো পাতানো নির্বাচনের চিন্তা বা চেষ্টা করবেই। সে হিসেবে সরকার বিভিন্নভাবে বিভিন্ন দলকে নির্বাচনে নেওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা করতেই পারে। বিএনপিকেও নির্বাচনে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। তবে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। এ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে কোনো পাতানো নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে নতুন চার দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। সেগুলো হলো:
১. নির্বাচন কমিশন একতরফা তফসিল ঘোষণা করতে চাইলে ঢাকায় নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল করা হবে।
২. তফসিল ঘোষণার পরের দিন সারা দেশে প্রতিটি জেলা এবং মহানগরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল।
৩. আন্দোলনরত অন্যান্য বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন।
৪. জাতীয় সংকট নিরসনে সব রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে আগামী ২০ নভেম্বর ঢাকায় জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
আরও পড়ুন
অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আপনারা সমর্থন দিয়েছেন। এই অবস্থায় বিএনপির সঙ্গে থাকা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে এক মঞ্চে এসে আন্দোলনে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না? জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, ‘বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে সচেতন নাগরিকসহ সবাই ঐক্যমত পোষণ করেছেন। আমরাও করেছি। আমরা মহাসমাবেশ করেছি। আমরা শান্তিপূর্ণ সব কর্মসূচিতে একমত। আমরা যেহেতু আগামী ২০ নভেম্বর সংলাপ করার ঘোষণা করেছি, তাই সংলাপের পরই পরবর্তী করণীয় কী হবে তা ঠিক করা হবে।’
গ্রেপ্তার হতে পারি, আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নিজে গ্রেপ্তারের আশঙ্কা করছেন কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আশঙ্কা তো আছেই। আশঙ্কা তো উড়িয়ে দিতে পারি না। তারা কখন কোথায় কার ওপরে খড়গ নামাচ্ছে বলা তো যাচ্ছে না।’
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আল্টিমেটাম আর গণমিছিলেই কি সরকারের একতরফা তফসিল নির্বাচন ঠেকানো সম্ভব বলেন মনে করেন? জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শান্তিপ্রিয় একটা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। আমরা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ বা কোনো ধরনের অশান্তি তৈরি পারে এমন কর্মসূচিতে বিশ্বাসী নই। কিন্তু সরকার যে ধরনের কাজ করছে তা অমানবিক ও অনৈতিক। আমরা পরিষ্কার করে বলছি যে, শান্তিপূর্ণভাবে চাপ প্রয়োগ এবং কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করতে সব কিছুই করব।’
সরকার এখন পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলনসহ বিরোধী কোনো রাজনৈতিক দলের দাবি তোয়াক্কা করেনি। তফসিল যদি হয়ে যায়, নির্বাচন পর্যন্ত যদি যায় তাহলে আপনাদের পদক্ষেপ কী হবে? জানতে চাইলে মুফতি রেজাউল করীম বলেন, ‘আমরা তো সংলাপের কর্মসূচি দিয়েছি। জাতীয় সংকট নিরসনে সব রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে আগামী ২০ নভেম্বর ঢাকায় জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’
সরকারকে ‘ফেরাউন’ ও ‘জালেম’ আখ্যা দিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, ‘জনদাবি যারা উপেক্ষা করে তারা তো জালেম। বাংলাদেশে কিন্তু গণবিস্ফোরণ ঘটেছে। এই সরকার জালেম ও অগণতান্ত্রিক। তারা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না।’
পরে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘জালেমের জুলুমের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে তারা নিজেরাই ধ্বংস হয়। ফেরাউনও ধ্বংস হয়েছে। আমরা সেই দিনটার অপেক্ষাতেই আছি।’
জেইউ/কেএ