এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ কার্যালয়, নেতারা কেউ কারাগারে কেউ আত্মগোপনে
গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে পর থেকে এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে দলটির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যের মৃত্যু এবং সহিংসতার জেরে গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অর্ধ শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এসব মামলায় এরই মধ্যে বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। বাকি যেসব নেতাকর্মী বাইরে আছেন তারাও গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে চলে গেছেন। ফলে দলটির ডাকা অবরোধ কর্মসূচিতে কোনো নেতাকে প্রকাশ্যে রাজপথে দেখা যায়নি। ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শুধুমাত্র দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কথা বলেছেন। তাও অজ্ঞাত স্থান থেকে!
বিএনপি নেতারা বলছেন, সংঘর্ষের পরের দিন গুলশানে নিজ বাসা থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার ৩ দিন পর আত্মগোপন থাকা অবস্থায় রাজধানীর শাহজাহানপুরের একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর ) মধ্যরাতে গুলশানে একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ গত ৭ দিনে ৫ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও পুলিশের গুলিতে সারাদেশে ৮ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন।
জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া গত কয়েক বছর ধরে অসুস্থ হয়ে বাসা আছেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারও এখন অসুস্থ। তারা কেউ মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় নন।
আরও পড়ুন
এর বাইরে গত ৬ মাসের অধিক সময় ধরে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু লন্ডনে এবং সালাহউদ্দিন আহমেদ গত ৮ বছর ধরে ভারতে অবস্থান করছেন। বাকি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান ২৮ অক্টোবর পর থেকে আত্মগোপনে আছেন।
আর স্থায়ী কমিটির একমাত্র নারী সদস্য সেলিমা রহমান আত্মগোপনে না থাকলে ২৮ অক্টোবর পর থেকে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। শুধু স্থায়ী কমিটির সদস্য নয়, মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সম্পাদকমণ্ডলী অন্য সদস্যরা ২৮ অক্টোবর পর থেকে গা-ঢাকা দিয়ে আছেন। ফলে গত ২৯ তারিখ দলটির ডাকা হরতালে এবং ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হলেও এসব কর্মসূচিতে রুহুল কবির রিজভী ছাড়া কেন্দ্রীয় কোনো নেতাকে দেখা যায়নি।
এদিকে গত ২৮ অক্টোবর বিকেল থেকে এক সপ্তাহে ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। এর মধ্যে ২৯ ও ৩০ অক্টোবর দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুলিশের সিআইডির ক্রাইম সিনের আওতাধীন ছিল। এরপর থেকে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুই পাশে অনেকটা পুলিশ পাহারায় রয়েছে। ফলে গ্রেপ্তার এড়াতে দলটির কোনো নেতাকর্মী কার্যালয়ে আসেনি। কার্যালয় তালাবদ্ধ থাকায় গতকাল ইসির সংলাপের আমন্ত্রণপত্রটি কেউ গ্রহণ করেননি।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর ) বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নির্বাচন কমিশন সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে দেওয়া চিঠি এখনও গেটের কাছে রাখা একেটি চেয়ারে পড়ে আছে। কেউ নেয়নি। শুধু ইসির চিঠি নয়, আরও বিভিন্ন ঠিকানা থেকে আসা চিঠিও ওই চেয়ারে পড়েছিল।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বিএনপির সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন সেটা হতে দিচ্ছে না। শুধু কেন্দ্রীয় নেতারা নন, থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের নেতাকর্মীও ঘরে থাকতে পারছেন না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে পুলিশ ওয়ার্ডে ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।
বুলবুল বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা তো পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষই তো গত ৪ দিনের কর্মসূচি সফল করেছে। তার অর্থ হচ্ছে, মানুষ চায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। যার দাবিতে আমরা আন্দোলন করে আসছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পার্টি অফিসে তো পুলিশ তালা লাগিয়ে রেখেছে। তাহলে কীভাবে যাবে নেতাকর্মীরা? আর গেলেই তো গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে আমি আমার থানার ওসিকে ফোন করে বলেছি, আপনারা এসব বেআইনি কার্যক্রম বন্ধ করেন। আমরা পার্টি অফিস যাব। সেখান থেকে কর্মসূচি পালন করব। পালিয়ে বেরিয়ে তো কর্মসূচি করতে পারব না। এই বয়সে সেটা সম্ভবও নয়।
নাম না প্রকাশের শর্তে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিক একটি দলের শীর্ষ নেতা বলেন, গত কয়েক দিনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ২ জন সদস্যসহ একাধিক নেতা আত্মগোপনে থেকেও গ্রেপ্তার হয়েছেন। ফলে আত্মগোপনে থেকেও যখন গ্রেপ্তার এড়ানো যাচ্ছে না। তাই তাদের প্রকাশ্যে বেরিয়ে রাস্তায় কর্মসূচি পালনের সময় গ্রেপ্তার হওয়াটাই উচিত। এতে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত থাকবে। তারা সাহস হারাবে না।
এএইচআর/এসকেডি