হরতাল থেকে অবরোধের ‘পুরোনো অস্ত্রে’ বিএনপি
শনিবারের মহাসমাবেশ পণ্ড এবং সেখানে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে সারা দেশে বিএনপির ডাকা রোববারের সকাল-সন্ধ্যার হরতাল শেষ হয়েছে। হরতালে রাজধানীতে কয়েকটি ঝটিকা মিছিল ছাড়া বিএনপির তেমন কোনো তৎপরতা ছিল না।
এবার নতুন করে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। নিরুত্তাপ হরতালের পর অবরোধ কর্মসূচি কতটা সফল হবে তা নিয়ে এক ধরনের সংশয় আছে। কারণ, এর আগে টানা কয়েক বছর অবরোধ পালন করেও দলটি সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে পারেনি।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক এবং অন্য নেতাদের বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান নিয়ে আজ রোববার দিনভর উত্তাপ উৎকণ্ঠা ছিল। তবে, হরতালের সমর্থনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সেভাবে মাঠে দেখা যায়নি।
বিএনপি নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান
রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৮টার দিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের গুলশানের বাসা ঘেরাও করে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাকে বাসা থেকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
এরপর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদের বনানীর বাসা ঘেরারও করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে তাকে বাসায় না পেয়ে ফিরে যায় পুলিশ।
শনিবার মধ্যে রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের শাজাহানপুরের বাসভবনে একাধিকবার অভিযান চালায় পুলিশ। তার পরিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে মির্জা আব্বাস বাড়িতে ছিলেন না।
এছাড়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বাসায় এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনের বাসায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইশরাক হোসেনকে বাসায় না পেয়ে তার ছোট ভাই ইশফাক হোসেনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
হরতাল সফল হওয়ার দাবি
বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন তাদের রোববারের হরতাল সফল হয়েছে। তাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরাও এটিকে সফল হরতাল বলে অভিহিত করেছেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, হরতালের শুরুতে সকাল ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জ এলাকায় বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল হয়। এরপর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি মগবাজার এলাকায়, যুবদল নর্দা এলাকায় মিছিল করে। এছাড়া ঢাকা মহানগর বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয় হরতালের সমর্থনে। এর বাইরে হরতালের সমর্থনে গণতন্ত্রমঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, গণঅধিকার পরিষদ (নুরুল হক নুর), লেবার পার্টি (মোস্তাফিজুর রহমান ইরান) রাজধানীর পল্টন, প্রেস ক্লাব, মালিবাগ এবং আবুল হোটেল এলাকায় মিছিল হয়।
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক দেশব্যাপী বিরোধী দলসমূহ ডাকা হরতাল সর্বাত্মকভাবে সফল করায় দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, এই হরতাল সরকার ও সরকারি দলের প্রতি দেশের মানুষের চূড়ান্ত অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ। সরকার ও সরকারি দলের পরিকল্পিত সহিংসতা, শতশত নেতাকর্মীকে আহত করা, বিরোধী নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তারসহ ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টির পাঁয়তারার মধ্যে এ হরতাল সরকার ও সরকারি দলের দখলদারিত্ব ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দেশের মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের প্রমাণ।
গতকাল থেকে সংঘটিত ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে সরকার নির্বাচন কেন্দ্রিক সংকট সমাধানের শান্তিপূর্ণ পথ বাস্তবে বন্ধ করে দিয়েছে উল্লেখ করে সাইফুল হক বলেন, দেশকে তারা সংঘাতের পথেই ঠেলে দিল।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের মানুষ আজ সর্বাত্মকভাবে হরতাল সফল করেছে।
নতুন কর্মসূচি ‘পুরোনো’ অবরোধ
রোববার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঘোষণা করেন আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা অবরোধ পারণ করবে বিএনপি ও এর শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ।
তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে হামলা, নেতা-কর্মীদের হত্যা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি হয়রানি ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।
এএইচআর/এসকেডি