যা কিছু করা দরকার তাই করতে হবে : ফখরুল
সরকারের পতন ঘটাতে যা কিছু করা দরকার তাই করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এজন্য সবাইকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
শনিবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত শিক্ষক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট এ সমাবেশের আয়োজন করে। এতে সারা দেশ থেকে সহস্রাধিক শিক্ষক-কর্মচারী নেতা অংশগ্রহণ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন আমরা যে দুঃশাসনের মধ্যে পড়েছি, যারা আমাদের বুকের ওপরে চেপে বসে ছড়ি ঘুরাচ্ছে, মারছে, খুন করছে, হত্যা করছে, লুণ্ঠন করছে.. এদের সরানোর দায়িত্ব কার? এই স্যাংশনের ওপর নির্ভর করে থাকলে হবে? ভিসা নীতির ওপর নির্ভর করে থাকলে হবে? অন্য কেউ করে দিয়ে যাবে?
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, যা করার আমাদেরকেই করতে হবে। সেটা করতে এখন ভালো কথা শুনছে না, শান্তির কথা শুনছে না। আমরা বার বার বলছি যে, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি.. বলছি, পদযাত্রা করছি, রোড মার্চ করছি, সমাবেশ করছি...। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। ওই জন্য এখন শোনাতে হবে এবং এজন্য যা কিছু করা দরকার তাই করতে হবে। সেজন্য আজকে সমগ্র জাতিকে এগিয়ে আসতে হবে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো আহ্বান জানাচ্ছি, অনেক কষ্ট দিয়েছেন মানুষকে, অনেক হত্যা করেছেন আমাদের ভাইকে, অনেক স্ত্রীকে স্বামীহারা করেছেন, অনেক মাকে পুত্রহারা করেছেন, অনেক সন্তানকে পিতাহারা করেছেন, অনেক রক্ত ঝরিয়েছেন। এখনো সময় আছে বিদায় হোন। আপনারা যে অপকর্ম করেছেন, এই অপকর্মের জবাবদিহি আপনাদেরকে একসময় করতে হবে। তার আগে সসম্মানে যদি বিদায় হতে চান তাহলে এখনই বিদায় হোন।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, পদত্যাগ করুন, সংসদ বিলুপ্ত করুন এবং স্পষ্ট করে বলছি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন।
আরও পড়ুন
বিদেশিরা কেউ বলেনি কেয়ারটেকার সরকারের কথা— গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা বলতে হয় না.. ওটা বুঝা যায় যে, এখানে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীন ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তার প্রমাণ দিয়েছে ’১৪ সালে, ১৮ সালে, আর এখনো প্রমাণ দিচ্ছে। আর বলে কিনা নির্বাচন তো সুষ্ঠু করা আমাদের কর্তব্য, সুষ্ঠু করছি। গতকাল প্রেস কনফারেন্সে বলেছেন, ‘আমাদের নির্বাচন নিয়ে এতো কথা আমি বুঝতে পারি না। আমরা করছি সুন্দর নির্বাচন, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করছি।’ এখন এই কথাগুলো শুনলে আমি আগেও বলেছি, ঘোড়াও হাসে। ওনারা সুষ্ঠু নির্বাচন করেন এটা বিস্ময় ব্যাপার।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, যাই হোক অবৈধভাবে হোক আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো। ১৫ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী আছেন। উনি কি একবারও চিন্তা করেন না যে, তার এই কথাটা শুনে মানুষ হাসবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, র্যাবের ওপর স্যাংশন দিয়েছে… ওরা মানুষ খুন করতো, কথায় কথায় গুলি করে মেরে দিতো, গুম করে দিতো… আর ভিসা নীতি করেছে। ভিসা নীতিতে এখন সবাই আতঙ্কিত। ওদের যারা দুর্নীতি করেছে, যারা অন্যায় করেছে, যারা বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড করেছে, যারা বিচারক হয়ে দলীয়ভাবে বিচার করছে, যে ব্যবসায়ী চুরি করছে, দুর্নীতি করছে সবাই এখন আতঙ্কিত হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের ছাপ আমরা দেখতে পারছি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুখে। ক’দিন আগে চিফ জাস্টিস হয়েছিলেন বিচারপতি এটিএম আফজাল, তিনি বলেছেন, রং হেডড পারসন…রায়ের মধ্যে তিনি লেখেছিলেন। সেই রং হেডেড পারসন আরও রং হেডেড হয়ে গেছেন। রং হেডড পারসন যদি আরও রং হেডেড হয় তাকে কি বলে? উন্মাদ। আমাদের একজন খুব মেধাবী ছাত্র সে একটা কার্টুন পত্রিকা বের করতো সেটার নামই ছিল উন্মাদ।
মির্জা ফখরুল বলেন, এসব ডিগবাজিতে কোনো লাভ হবে না। ডিগবাজি করে একবার বাইরে যাচ্ছে, ওদিকে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার সময় নাই.. এতো কান্নাকাটি করার দরকার কি বলেছেন। আমরা বলতে চাই, রাজনৈতিকভাবে আপনার সময় হয়ে গেছে। দয়া করে মানে মানে কেটে পড়েন। তা না হলে জনগণ আপনাকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাবে।
আগামীতে ক্ষমতায় গেলে খালেদা জিয়ার অঙ্গীকার শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল। একই সঙ্গে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করাসহ তাদের ওপরে নিপীড়ন-নির্যাতন ও কারাগারে প্রেরণের ঘটনার সমালোচনা করেন তিনি।
শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও শিক্ষক সমিতির মহাসচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুগিস উদ্দিন মাহমুদ ও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এএইচআর/এমএ