হাসপাতালে ২ মাস, কেমন আছেন খালেদা জিয়া?
দীর্ঘ দুই মাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এই সময়ের মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে তিনবার সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে কেবিনে চিকিৎসা চললেও সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই। যে কারণে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। দলের পক্ষ থেকেও তাকে বিদেশে পাঠাতে অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি বারবার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। তার হার্টের তিনটি ব্লকের মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তার পেটে পানি জমে যায়। তখন তাকে সিসিইউতে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, দাঁত ও চোখের প্রদাহ, হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন তিনি। যে কারণে দেশে খালেদা জিয়ার সম্পূর্ণ চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। যেহেতু তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাই দেশে জোড়া-তালি দিয়ে তার চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যখন যে রোগ দেখা দিচ্ছে, ওষুধ দিয়ে সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই অবস্থায় খালেদা জিয়া কবে হাসপাতাল থেকে আবার বাসায় ফিরবেন তা বলা সম্ভব নয়।
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কয়েকদিন পর লন্ডন থেকে দেশে আসেন তার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দ শর্মিলা রহমান সিঁথি। বর্তমানে প্রতিদিন নিয়ম করে বড় একটা সময় হাসপাতালে শাশুড়িকে সময় দিচ্ছেন তিনি।
আরও পড়ুন
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ম্যাডামের অবস্থা ভালো নয়। মেডিকেল বোর্ড তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছে।
বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশে যে ম্যাডামের চিকিৎসা সম্ভব নয় এটা চিকিৎসকরা বারবার বলেছেন। এখন যেটা হচ্ছে, তা হলো জোড়া-তালির চিকিৎসা, কার্যকরী চিকিৎসা হচ্ছে না। অর্থাৎ ওনার যখন যে সমস্যা হচ্ছে ওষুধ দিয়ে আপাতত সেটার সমাধান করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ম্যাডাম শারীরিকভাবে অত্যন্ত অসুস্থ হলেও মনোবল খুব দৃঢ়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এরইমধ্যে জানিয়েছেন, তিনি (খালেদা জিয়া) শর্তসাপেক্ষে বিদেশে যাবেন না। অর্থাৎ তিনি আপসহীন নীতিতে অটল আছেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ম্যাডামের অবস্থা ভালো নয়। চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। হাসপাতালে ম্যাডামের পাশে আছেন ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দ শর্মিলা রহমান সিঁথি। তিনি ম্যাডামের দেখভাল করেন।
বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার নিজ থেকে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাবে না, এটা এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। খালেদা জিয়া নিজেও কোনো সমঝোতার মাধ্যমে বিদেশে যেতে চান না। তাকে এখন বিদেশে পাঠাতে হলে মাঠে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি দেশে-বিদেশে জনমত গঠন করতে হবে। দল থেকে সেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর পরিবার তাদের মতো চেষ্টা চালিয়ে যাবে। ৪০১ ধারা অনুযায়ী ম্যাডামকে বিদেশে পাঠানো সম্ভব নয় বলে পরিবারের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সরকার। ফলে এখন পরিবার তার মুক্তি ও চিকিৎসা নিয়ে কোন প্রক্রিয়ায় এগোবে সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে। তবে, তারা দল থেকে কোনো সহযোগিতা চাইলে আমরা করব।
আরও পড়ুন
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হবে এটা কীভাবে আশা করেন। এখন দেশে যতটুকু চিকিৎসা সম্ভব সেটুকু করতে হবে। মরতে তো সবাইকে হবে। কেউ আগে মরব, কেউ পরে। কিন্তু মরণতো আর শেখ হাসিনার হাতে নেই।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও মুক্তি নিয়ে বিএনপির করণীয় প্রশ্নে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, যেটা করা দরকার সেটা তো করছি। আমরা তো আর কাউকে খুন করতে পারব না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যা করা দরকার তাই করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, সরকারপ্রধান যে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেবে না, এটা সবাই বুঝে ফেলেছে। এখন যদি কোনো সমাধান হয় মূলত রাস্তায় হতে পারে। পাশাপাশি কূটনৈতিক দিক থেকেও খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির একটা পরিকল্পনা রয়েছে।
এই নেতা আরও বলেন, মাঝখানে শুনেছি সরকারের একজন মন্ত্রী বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু কী কথা বলেছেন বা কী বিষয়ে কথা হয়েছে তা জানি না। এটা নিয়ে স্থায়ী কমিটিতেও আলোচনা হয়নি।
এএইচআর/জেডএস